bsec lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে হারহামেশাই ভুল তথ্য দিচ্ছে। ভুল তথ্যের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে এবার আইন করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আইনে কোম্পানির দেওয়া ভুল তথ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন এমন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া ভুল তথ্য দাতা কোম্পানির বিরুদ্ধে যাতে সরসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তেমন বিধিও আইনে রাখা হবে। বিএসইসি সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশ হওয়া প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক ভুল ইপিএস দেখিয়েছে। ব্যাংকটির দেওয়া তথ্যে বিশ্বাস রেখে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পরবর্তীতে ব্যাংকটি ভুল স্বীকার করে সংশোধনীও দেয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়নি।

বিএসইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, কোম্পানি বা অন্য কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান (স্টক এক্সচেঞ্জ, নিরীক্ষক, সম্পদ মূল্যায়নকারী প্রভৃতি) থেকে দেওয়া ভুল তথ্যে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো বিধান নেই। স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারাও বলেছেন, এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব বিষয়েও কোনো আইনে কিছু বলা নেই। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি ঠেকাতে অনতিবিলম্বে এ ধরনের আইন করা প্রয়োজন।

ডিএসই’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) সংক্রান্ত প্রকাশিত তথ্যটি ভুল’ রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানোর পরও ব্যাংকটির লেনদেন স্থগিত করা হয়নি। কারণ বিএসইসির পূর্ব অনুমোদন ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করলে তা অনেক সময় কমিশনের কর্মকর্তারা পছন্দ করেন না। তাই কেউ দায়িত্ব নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে চান না। আবার লেনদেন স্থগিত বিষয়ে অনুমোদন নেওয়াও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন থাকা উচিত।

ডিএসই থেকে জানা যায়, গত ৩১ জুলাই ডিএসই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রূপালী ব্যাংকের ইপিএস ৮.৬৭ টাকা হয়েছে বলে জানানো হয়। মুনাফায় বড় উত্থানের খবরে বিনিয়োগকারীরা আগের দিনের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি দরে শেয়ার কিনেছিলেন। শেয়ারটির দর আরও বাড়তে পারে এমন ধারণায় শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ার বিক্রি থেকে বিরত থাকেন। ফলে বিপুল পরিমাণ শেয়ারের ক্রয় আদেশের বিপরীতে লেনদেনের পুরো সময়ে কোনো বিক্রয় আদেশ ছিল না।

এমন অবস্থাতেও ওইদিন দুই শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির প্রায় সাড়ে ৮ লাখ শেয়ার কেনাবেচা হয়। যা গত পাঁচ বছরের রেকর্ড। শেয়ার লেনদেন চলাকালে রূপালী ব্যাংক জানায়, ইপিএস-সংক্রান্ত আগের তথ্যটি ভুল। প্রকৃতপক্ষে বছরের প্রথম ছয় মাসে ইপিএস অর্জিত হয়েছে মাত্র ০.১১ টাকা। সংশোধিত ইপিএস প্রকাশের পর টানা দু’দিনে শেয়ারটির দর ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছিল। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণসহ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষাতে আইন করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন বিএসইসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিএসইসি’র কর্মকর্তারা জানান, ভুল তথ্যে নির্ভর করে শেয়ার কিনলে বিনিয়োগকারীর লোকসান হতে পরে। প্রকাশিত তথ্য ভুল বলে শনাক্ত হওয়ার পর সেটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করার বিষয়টি আইনে থাকবে। একই সঙ্গে ভুল তথ্য প্রকাশ এবং লেনদেন স্থগিত করার আগ পর্যন্ত সময়কাল অল্প হলে সংঘটিত লেনদেনগুলো বাতিল করারও বিধান থাকবে। তবে সময়কাল দীর্ঘ হলে বিধান কী হবে তা ভাবা হচ্ছে।

কবে নাগাদ আইনটি করা হতে পারে এমন প্রশ্নে বিএসইসির কর্মকর্তারা বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এক পরিস্থিতিতে আইনটি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে এখনও আইন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় যতটা দ্রুত সম্ভব আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মুনাফা-সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রকাশ রূপালী ব্যাংকের ক্ষেত্রেই প্রথম নয়। ২০১৪ সাল থেকে গত আড়াই বছরের প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ে ভুল তথ্য দেয় বেশ কয়েকটি কোম্পানি।

ড্রাগন সোয়েটারের ৩১ মার্চ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ০.৫০ টাকা হয়েছে বলে ডিএসই-তে প্রকাশ হয়। অথচ ২৯ জুন জানানো হয়, প্রখম প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস অর্জিত হয়েছে মাত্র ০.১৩ টাকা। ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিল ড্রাগন সোয়েটার।

গত ২৯ মার্চ সেন্ট্রাল ফার্মা জানায়, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানির ইপিএস হয় ০.৪৬ টাকা। সংশোধনীতে জানানো হয়, প্রকৃত ইপিএস ০.৬১ টাক। এ ছাড়া গত বছরের ২০ মে জাহিন স্পিনিং জানায়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ তথ্যটি গত বছরের ৪ মে ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। অথচ পরে এক সংশোধনীতে কোম্পানিটি জানায়, ওই বছরে নিট মুনাফা হয়েছিল ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।

একইভাবে অ্যাপোলো ইস্পাত কোম্পানিটিও ৩১ মার্চ সমাপ্ত তৃতীয় ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেওয়া হয়। এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ডেরও ৪ ফেব্রুয়ারি সমাপ্ত সপ্তাহ শেষে ফান্ডটির ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে ও বাজারমূল্যের ভিত্তিতে সম্পদমূল্য উল্টোভাবে প্রকাশ হয়েছে।