gsk lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের শেয়ারের দর গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম অবস্থানে রয়েছে। গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি কোম্পানির পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬১ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে গেছে। হেলথ ফুড ড্রিংকসের বিক্রি কমে যাওয়ার প্রভাব দেখা যাচ্ছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবসায়।

জানা গেছে, মূলত ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হলেও বাংলাদেশে জিএসকের মূল পণ্য হরলিক্স, বুস্টের মতো হেলথ ফুড ড্রিংকস। গত বছর থেকেই বাংলাদেশের বাজারে এসব পণ্যের বিক্রয় প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় বিক্রি কমে গেছে জিএসকের। চলতি বছরও জিএসকে বাংলাদেশের বিক্রিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি যাচ্ছে। দ্বিতীয় (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে গেছে।

glaxo 1 yearসর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, জুন পর্যন্ত তিন মাসে জিএসকে বাংলাদেশ মোট ১৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করে, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৬৬ কোটি ৫৬ লাখ ২ হাজার টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে উত্পাদন ও অন্যান্য খরচ কিছুটা কমলেও কোম্পানির পরিচালন ব্যয় ২০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেড়েছে। এপ্রিল-জুন সময়ে জিএসকের মোট পরিচালন ব্যয় হয় ৪৮ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ার পরও পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা পড়েছে কোম্পানির মুনাফায়। ২০১৫ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে জিএসকে বাংলাদেশের নিট মুনাফা ছিল ১৪ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা, চলতি বছরের একই সময়ে যা ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় নেমে আসে। একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১২ টাকা ২৯ পয়সা থেকে ৪ টাকা ৭৬ পয়সায় নেমে যায়।

এদিকে সর্বশেষ প্রান্তিকে মুনাফা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার প্রভাব দেখা যাচ্ছে অর্ধবার্ষিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও। জানুয়ারি-জুন সময়ে কোম্পানির নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমেছে। পণ্য বিক্রি কমেছে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে পরিচালন ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

জানা গেছে, জিএসকে বাংলাদেশের মোট পণ্য বিক্রির ৭০ শতাংশ আসে হেলথ ফুড ড্রিংকস পণ্য থেকে। তবে এসব পণ্যের ব্যাপারে ভোক্তাদের সতর্ক অবস্থান ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধভাবে হেলথ ফুড ড্রিংকস আমদানি হওয়ায় ২০১৫ সালের শুরু থেকেই জিএসকে বাংলাদেশের বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাঁচ বছরের মধ্যে গত বছরই প্রথম পণ্য বিক্রিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখায় বাজার শেয়ারে শীর্ষস্থানে থাকা কোম্পানিটি। জিএসকে বাংলাদেশের হেলথ ফুড ড্রিংকস ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে হরলিক্স, বুস্ট, মলটোভা ও ভিভা। তবে হরলিক্স একাই হেলথ ফুড ড্রিংকস বাজারের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দখল করে আছে।

২০১৫ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা আস্থার ঘাটতি এবং অবৈধ আমদানির কারণে জিএসকে বাংলাদেশের হেলথ ফুড ড্রিংকস ব্যবসা কমেছে। অবৈধ আমদানি রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগও নিয়েছে কোম্পানিটি। অবৈধ আমদানি প্রতিরোধে ক্রেতা-ভোক্তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি ভোক্তাদের আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানায় জিএসকে বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ।

প্রসঙ্গত ১৯৪৯ সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে ওষুধ আমদানিকারক হিসেবে বাংলাদেশে যাত্রা করে জিএসকে। ১৯৬৭তে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে উত্পাদন শুরু করে। একপর্যায়ে মূলত হরলিক্সের মাধ্যমে ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) উত্পাদনেও শক্তিশালী অবস্থান করে নেয় জিএসকে বাংলাদেশ।

কোম্পানিটি ১৯৭৬ সালে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এর অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ২৪৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশই কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৭ দশমিক শূন্য ৭ ও মাত্র দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বশেষ ১ হাজার ৬৫৭ টাকা ৮০ পয়সায় জিএসকে বাংলাদেশের শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর ছিল ২ হাজার ২৪৮ টাকা ও সর্বনিম্ন ১ হাজার ৬৩০ টাকা।