dse-up-dowenশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে ৫টি কোম্পানি প্রাথমিত গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বাজার ২৪১ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ১৪৩ কোটি ৭ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকার প্রিমিয়াম রয়েছে। তবে তালিকাভুক্তির ৫ বছর পরে প্রিমিয়ামসহ পুঁজিবাজারে আসা তিন কোম্পানির শেয়ার দর ইস্যুমূল্যের নিচে অবস্থান করছে।

আর ফেসভ্যালুতে আইপিওতে আসা ২ কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর কাছাকাছি রয়েছে। ২০১১ সালে পুঁজিবাজারে আসা ৫ কোম্পানির মধ্যে আরডি ফুড, জাহিন টেক্স, দেশবন্ধু পলিমার, বারাকা পাওয়ার (পূর্বে ছিল বরকতউল্লাহ ইলেক্ট্রোডায়নামিকস) এবং সালভো কেমিকেল রয়েছে।

এর মধ্যে আরডি ফুড, জাহিন টেক্স এবং বারাকা পাওয়ার প্রিমিয়ামসহ পুঁজিবাজারে এসেছে, যাদের শেয়ার দর বর্তমানে ইস্যু মূল্যের নিচে রয়েছে। অন্যদিকে ফেসভ্যালুতে বাজারে আসা দেশবন্ধু পলিমার এবং সালভো কেমিকেলের শেয়ার দর ইস্যুমূল্যের কাছাকাছি রয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালে পুঁজিবাজারে আসা রংপুর ডেইরি লি. (আরডি ফুড) ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার ৪০০ শেয়ার ছেড়ে ৮ টাকা প্রিমিয়ামসহ ১৮ টাকা ইস্যুমূল্যে ২৯ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে।

এর ১৩ কোটি ৭ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা হচ্ছে প্রিমিয়াম। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ডিএসইতে এ কোম্পানির শেয়ার ১২.৬০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। আইপিওর পূর্বে ৩০ এপ্রিল ২০১০ তারিখ পর্যন্ত হিসাব অনুসারে এ কোম্পানির এনএভি ছিল ২০.৫৩ টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০.৮৮ টাকা।

এ কোম্পানির শেয়ারে আইপিও চলাকালীন সময়ে ১৮.৫৯ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। আইপিও পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে আরডি ফুডের ইপিএস দাঁড়ায় ২.২৬ টাকা। ২০১২ সালে ইপিএস ছিল ১.০০ টাকা, ২০১৩ সালে ০.৮৯ টাকা এবং ২০১৪ সালে ইপিএস ছিল ০.৭৬ টাকা।

অন্যদিকে কোম্পানিটি ২০১১ সালে বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল, তাছাড়া ২০১২ সালে ১০ শতাংশ স্টক, ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ স্টক, ২০১৪ সালে নো ডিভিডেন্ড প্রদান করে। এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিল অ্যালায়েন্স ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লি.।

২০১১ সালে পুঁজি বাজারে আসা জাহিন টেক্স ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৫ টাকা ইস্যুমূল্যে বাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ডিএসইতে এ কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ২৩ টাকা। আইপিওর পূর্বে ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখ পর্যন্ত হিসাব অনুসারে এনএভি ছিল ৪৬.০১ টাকা এবং ইপিএস ৩.০৫ টাকা।

অন্যদিকে আইপিওর পরে ২০১২ সালে ইপিএস হয়েছে ২.৩৪ টাকা, ২০১৩ সালে ১.৩৮ টাকা, ২০১৪ সালে ০.৮২ টাকা এবং ২০১৫ ইপিএস হয়েছে ১.২১ টাকা। তাছাড়া কোম্পানিটি ২০১২ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ স্টক, ২০১৩- ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ স্টক, ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ স্টক এবং ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে। এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিল এএএ কনসালটেন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার লি.।

২০১১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া দেশবন্ধু পলিমার ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। সর্বশেষ ডিএসইতে গতকাল এ কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ১০.৭০ টাকা।

আইপিওর পূর্বে ৩০ এপ্রিল ২০১০ তারিখ পর্যন্ত হিসাব অনুসারে ইপিএস ছিল ৩.৪৭ টাকা এবং এনএভি ১৩.৬৩ টাকা। আইপিও পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে এ কোম্পানির ইপিএস ছিল ১.৫২ টাকা, ২০১২ সালে ১.১৬ টাকা, ২০১৩ সালে ০.২৬ টাকা, ২০১৪ সালে ১.০৫ টাকা এবং ২০১৫ সালে ০.৪১ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে দেশবন্ধু পলিমার ২০১১ সালে বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ স্টক, ২০১২ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক, ২০১৩ সালে ৫ শতাংশ স্টক, ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ স্টক এবং ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। এ কোম্পানির ম্যানেজার টু দি ইস্যুর দায়িত্বে ছিল ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লি.।

২০১১ সালে পুঁজি বাজারে আসা বরকতউল্লাহ ইলেক্ট্রোডায়নামিকস লি. পরবর্তীতে ৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে নাম পরিবর্তন করে বারাকা পাওয়ার হয়েছে। এ কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ২০ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৫০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৬০ টাকা ইস্যু মূল্যে ১২০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে।

এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ডিএসইতে এ কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ২৯.৫০ টাকা। আইপিওর পূর্বে ৩০ জুন ২০১০ তারিখ পর্যন্ত হিসাব অনুসারে এনএভি ছিল ১১.৭০ টাকা এবং ইপিএস ১.৭৬ টাকা।

আইপিও পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে ইপিএস ছিল ২.৩২ টাকা, ২০১২ সালে ১.৯০ টাকা, ২০১৩ সালে ১.৪৮ টাকা, ২০১৪ সালে ১.৯০ টাকা এবং ২০১৫ সালে ২.৭৬ টাকা। অন্যদিকে কোম্পানিটি ২০১১ সালে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ স্টক ২০১২ সালে ২১ শতাংশ স্টক, ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক, ২০১৪ সালে ১৭ শতাংশ স্টক এবং ২০১৫ সালে ৮ শতাংশ ক্যাশ ও ৮ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে। এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিল প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি.।

২০১১ সালে পুঁজিবাজারে আসা সালভো কেমিকেল ২ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ডিএসইতে এ কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ১০.৬০ টাকা। আইপিওর পূর্বে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখের হিসাব অনুসারে এনএভি ছিল ১০.৮২ টাকা এবং ইপিএস-০.৯১ টাকা।

আইপিওর পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে ইপিএস হয়েছে ০.৬২ টাকা, ২০১২ সালে ০.৭১ টাকা, ২০১৩ সালে ১.০৯ টাকা এবং ২০১৪ সালে ১.১৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২০১১ সালে ৫ শতাংশ স্টক, ২০১২ সালে ৫ শতাশ স্টক, ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ স্টক এবং ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিল এএএ কনসালটেন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার লি.।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুঁজিবাজার ধস-পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে আইপিওর অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে বলে জানা যায়। তাছাড়া এ সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকলেও ২০১০ সালের মতো কোন ধরনের অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায়নি।

২০১১ সালে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করেছে গত ৫ বছরে এর সুফল বিনিয়োগকারীদের পাওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ইস্যু মূল্যে নিচে কিংবা কাছাকাছি রয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের হতাশ হতে হয়েছে।

তাছাড়া প্রিমিয়ামসহ পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানির শেয়ার দর ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসায় প্রিমিয়াম নেয়ার অনুমোদন দেয়ার যৌক্তিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অবশ্য ধস-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারে প্রিমিয়াম প্রদানের বিষয়ে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরই আপত্তি ছিল।