স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার বেশ কিছুদিন ধরে পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতনের পর গত সোমবার কিছুটা সূচকের উত্থান হলেও সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ফের দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।

তবে সূচকের টানা দরপতন হলেও বাজার নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর নিরব ভুমিকা পালন করছেন। অথচ দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। ফলে আস্থা ও তারল্য সংকটে হাহাকার হয়ে পড়ছে পুঁজিবাজার। এ অবস্থায় বাড়ছে ক্রেতা সংকট হিড়িক।

বাজার সংশ্লিষ্টরা হঠাৎ করে পুঁজিবাজারের এহেন আচরণের পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের মতে, অর্থনীতির সব সূচক এ মুহূর্তে ভালোর দিকে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ক্রমেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণ কী নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুঁজিবাজার আচরণের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতে সূচকের বড় উত্থান হলেও শেয়ার বিক্রির চাপে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। তবে লেনদেনের শুরুর দিকে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ কোম্পানি। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ায় লেনদেনের ২০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টা বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। তবে প্রথম দুই ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক কোম্পানির দাম কমার তালিকায় নাম বড় হওয়ার সাথে সাথে দিনশেষে সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।

দীর্ঘ মন্দার প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা গত বছরের পটপরিবর্তনের পর একটু বেশিই আশা করেছিলেন। কিন্তু টানা দরপতনে কারণে গত এক বছরে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী মুলধনের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হারিয়েছে। এ অবস্থার বছরের শুরুতে বাজার নিয়ে আশাবাদী হলেও গত তিন মাস জুন জুলাই ও আগস্টে বাজার কিছুটা স্বাভাবিক ছিলো।

ফলে বাজার স্বাভাবিক হওয়ার পর তারা নতুন করে বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই আবার অতীতের বাজার খেলোয়াড়রা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে আবার পূর্বের জুয়ার টেবিলে পরিণত হয় এটি। নামসর্বস্ব কয়েকটি কোম্পানি নিয়ে চলতে থাকে কারসাজি।

মতিঝিলে ডিএসইর বিভিন্ন ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কয়েকটি ট্রেডিং হাউজে গিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বললে তারা তাদের এ হতাশার কথা তুলে ধরেন। দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, একটি বাজারে মাসের পর মাস কিভাবে কয়েকটি নামসর্বস্ব কোম্পানির টানা মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে পারে। এসব কোম্পানির অতীত ইতিহাস, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা থাকলে কোনো কথা ছিল না।

কিন্তু মৌলভিত্তির কাছে না থাকা সত্ত্বেও কিভাবে একটি কোম্পানির শেয়ার দর দুই মাসে ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ বাড়তে পারে? অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ এগুলোর বিরূদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি যেগুলোর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার বেচাকেনা হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়। এগুলোর মূল্যবৃদ্ধিতে একমাত্র বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে স্বল্প মূলধনী। এ বাজার থেকে কী আশা করা যায়?

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, এ ভাবে পুঁজিবাজার চলতে পারে না। দিনের পর দিন টানা দরপতন হলেও নীতি নির্ধারকরা কোন ভুমিকা নিচ্ছেন না। বিনিয়োগকারীদের পুঁজি শেষ হওয়ার পথে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দরপতনে নতুন করে ৩০ শতাংশ পুঁজি উধাও। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা কি ভাবে আশা নিয়ে বিনিয়োগ করবে।

জানা গেছে, ফলে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমানে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তেমনি ডিএসই’র মতো অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিসংখ্যক কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতে মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে সিএসইতে টানা সাত কার্যদিবস দরপতন মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হলো। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১১১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৯৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫ টির, দর কমেছে ২৩৩ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৮ টির।

ডিএসইতে ৬০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৭৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৩০ কোটি টাকার। অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে।

সিএসইতে ২০৭ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৭৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৮ টির এবং ২৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।