পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান হলে আস্থা ফিরবে কী ভাবে
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: আস্থা ফেরাতে পুঁজিবাজারে কোন ম্যাজিক নেই। তবে বিনিয়োগ করলে লোকসান তা হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে কী ভাবে। তাছাড়া গতেএক মাসের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পুঁজি হাওয়া হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান হবে জেনে বুঝে কে বিনিয়োগ করবে এ প্রশ্ন এখন বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। কারণ আস্থা ফিরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা হঠাৎ করে পুঁজিবাজারের এহেন আচরণের পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের মতে, অর্থনীতির সব সূচক এ মুহূর্তে ভালোর দিকে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ক্রমেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পুঁজিবাজারও এখন নানা সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা থেকে ভবিষ্যতে একটি টেকসই বাজারের আশা করা যায়। তবে দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা না করে পুঁজিবাজার বাঁচাতে স্বল্প মেয়াদী ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকেই।
কারণ দেশের পুঁজিবাজারে আবারও নেমে এসেছে আস্থাহীনতার ছায়া। একসময় নতুন বিনিয়োগকারীর ভিড়ে মুখর ছিল বাজার, এখন তাঁরা একে একে সরে যাচ্ছেন। দীর্ঘ মন্দাভাব, টানা দরপতন ও নীতিগত অনিশ্চয়তায় পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও কমছে পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগ করে লোকসান ছাড়া কেউ মুনাফা করতে পারছেন না। ফলে দ্রুতই বাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া টানা দরপতনের ধারা থেকে কিছুতেই বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। দিন যতই যাচ্ছে ততই খাদের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। এ যেন এক নি:স্ব হওয়ার সহজ রাস্তা। ফলে প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাড়ছে হাহাকার। বিনিয়োগকারীরা দিনের পর দিন নি:স্ব হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই কোন ভুমিকা নিচ্ছেন না।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বড় দরপতনে ৮১ পয়েন্ট সূচক উধাও। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রির ফলে সেল প্রেসার বেড়ে যায়। গত পাঁচ কার্যদিবসে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নতুন করে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান নতুন বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে আসছে না। সবার মাঝে পুঁজিবাজার নিয়ে অজানা আতঙ্ক। এখানে বিনিয়োগ করলেও পুঁজি হারিয়ে যায়। তাই আস্থা সংকট দুর করতে না পারলেও নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না। তেমনি লেনদেনও বাড়বে না। এছাড়া গত ১ মাসের বেশি সময় দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর ৩০ শতাংশের বেশি মূলধন উধাও হয়ে গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে শুধু নীতিগত ঘোষণা নয়, দরকার কার্যকর পদক্ষেপ। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা, ন্যায্য মূল্যায়ন ও তারল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিলে বাজারে স্থিতি ফিরবে না।
এ বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন গনমাধ্যমকে বলেন, মানুষের আস্থা অর্জন করতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ থাকতে হবে। কয়েকজন লোককে শাস্তি দিলেই পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরে আসবে না। মানুষ এখানে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাওয়ার জন্য। যদি উল্টো লোকসান হয় তবে কীভাবে আস্থা ফিরবে? তিনি বলেন, ব্রোকার হাউসগুলোর পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ হচ্ছে।
টানা লোকসানে অস্তিত্ব না থাকার মতো অবস্থা। এরই মধ্যে অনেক ব্রোকার হাউসে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। তবে সব কর্মী ছাঁটাই করেও টিকে থাকা যাবে না, যদি বিদ্যমান মন্দা চলতে থাকে। বাজারে কোনো প্রকার পজিটিভ কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে বলে কর্তৃপক্ষের আচরণে বোঝা যায় না।

