পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের হতাশা রূপ নিচ্ছে আতঙ্কে, ৫ কার্যদিবসে ২৪৫ পয়েন্ট সূচক উধাও
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরণের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার যেমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন সংগ্রহের প্রধান উৎস, তেমনি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বিকল্প বিনিয়োগের স্থান। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বারবার আস্থার সংকট, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফলে দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছে না পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা মনে করে বিএসইসির অদক্ষ্য ও অযোগ্য কমিশনের কারণে বেহাল দশা দেশের পুঁজিবাজারের। ফলে টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার।
ফলে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। টানা দরপতনে বাজারের ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় বিনিয়োগকারীর। গত পাঁচ কার্যদিবস ধরে একটানা দরপতনে পুঁজিবাজার। যার ফলে গত পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর ২৪৫ পয়েন্ট সূচকের দরপতন হয়েছে। সূচকের টানা দরপতন হলেও নিরব আচরন করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
তেমনি টানা দরপতনে মুখ খুলছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। দেখে মনে হচ্ছে পুঁজিবাজার অবিভাবকহীন। তাছাড়া বাজার ভাল হওয়ার মতে বিএসইসির কার্যক্রমে নেই দৃশ্যমান উন্নতি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা আর অজানা আতঙ্ক ভর করছে। তেমনি পুঁজিবাজার যেন দীর্ঘদিন ধরেই এক রহস্যময় পতনের পথে হাঁটছে। বাজারের অবস্থা এমন জায়গায় ঠেকেছে যে মুনাফা তো দূরের কথা, পুঁজি টিকিয়ে রাখাই যেন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বছরের পর বছর ধরে যে আস্থাহীনতা বিরাজ করছে, তার উন্নতি তো দূরের কথা বরং চরম হতাশায় নিমজ্জিত দেশের অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাত। টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃশেষ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিধ্বস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সঙ্গে বাড়ছে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পুঁজিবাজারে সূচকও। বিশ্বের পুঁজিবাজার যখন ইতিবাচক ধারায় হাঁটছে, ঠিক তখনই এর উল্টো বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা পতনে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এমনকি দেওলিয়াত্ব কাটিয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় থাকা পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ অবস্থানে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার।
একাধিক বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন, এটা পুঁজিবাজার নয়, এটা মরন বাজার। এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসান নিশ্চিত যেনে কেউ বিনিয়োগ করবে না। এছাড়া পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকতা নেই, নেই যথাযথ তদারকি। কারসাজির অভিযোগ বহুদিনের, কিন্তু কার্যকর প্রতিরোধের অভাবে এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিরোধ যাও হচ্ছে, তাও ক্রমাগত বিতর্কের মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে কেবল নজরদারি বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, বরং সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।
জানা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে বেড়েছে টাকার পরিমাণে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২০২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১১৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৯৮ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭ টির, দর কমেছে ৩১১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮ টির। ডিএসইতে ৫৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৪ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানি মধ্যে ৩২ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪৭ টির এবং ১৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

