পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে পুঁজি নিয়ে আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা, ৩ কার্যদিবসে সূচক উধাও ১১০ পয়েন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সূচকের টানা পতনে বাজার নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন গত জুলাই আগস্ট মাসে বাজার কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস দিলেও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে সূচকের টানা দরপতনের নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এছাড়া যখনই বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা জাগতে শুরু করে ঠিক ততই নানা গুজবে বাজারকে অস্থির করে। গত তিন কার্যদিবসে ডিএসইর ১১০ পয়েন্ট সূচক উধাও হয়ে গেছে। এর ফলে সূচকের টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন পুঁজিবাজারে টানা উত্থানের পর টানা দরপতনের রহস্য কী। ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে সূচকের দরপতন হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে ডে ট্রেডারের ভুমিকায় অবর্তীন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে টানা ৩ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে সূচকের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান অস্থিরতার মধ্যেও বাজারের ভিত্তি পুরোপুরি দুর্বল নয়। সূচকের এই ওঠানামা একধরনের প্রাকৃতিক সমন্বয় প্রক্রিয়া। তবে তারা সতর্ক করেছেন, যদি বড় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ সময় নিস্কিয় থাকে এবং নতুন তহবিল প্রবাহ না ঘটে তাহলে বাজার আরও কিছুটা সময় চাপে থাকতে পারে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে প্রতিদিনই লেনদেনের শুরুতে কিছুটা ইতিবাচক প্রবনতা দেখা দিলেও দুপুরের পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপে সূচক নামতে শুরু করে। বড় বিনিয়োগকারীদের পর্যবেক্ষণমূলক অবস্থান, প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয় কমে যাওয়া এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কই বাজারের গতি মন্থর করে দিচ্ছে।
তবে সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিতর্কিত একটি চিঠি মুলত বাজারে দরপতনের কারণ থাকলেও পরবর্তীতে বিষয়টি সমাধান হয় এবং বাজার কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে পায়। কিন্তু অক্টোবর মাসের শুরুতে নতুন করে দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহ ও দ্বিধা তৈরি করছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই লেনদেনের শুরুতে কিছুটা ইতিবাচক থাকলেও মধ্যাহ্নের পর টানা পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র শঙ্কা তৈরি করেছে। গত তিন কার্যদিবসে ডিএসই ১১০ পয়েন্ট সূচক কমেছে, এর মধ্যে রোববার ২৪ পয়েন্ট, মঙ্গলবার সাড়ে ৪৬ পয়েন্ট এবং বুধবার ৩৯ পয়েন্টেরও বেশি কমে সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ৩৩৭.৮৬ পয়েন্টে।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৩৯ দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৩৭ পয়েন্টে। এছাড়া, ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ ১২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১১৪৯ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১৩ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে ২০৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আজ ডিএসইতে ৬১১ কোটি ৮৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিলো ৭৮৭ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫টি কোম্পানির, বিপরীতে ২২১ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে। সূচক যেমন কমেছে, তেমনি লেনদেনের টাকার পরিমাণও কমে গেছে। সিএসইতে আজ ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ১২ কোটি ২২ লাখ টাকার তুলনায় অনেক কম।

