শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের। গত ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক উধাও ৬৬৪ পয়েন্ট।

তবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে লাগাতার দরপতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। গত ১৮ আগস্ট ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্ট। আর গত বৃহস্পতিবার সূচক কমতে কমতে দাঁড়ায় ৫ হাজার ১১৪ পয়েন্ট। সূচকের সঙ্গে তলানীতে নেমে যায় লেনদেনের পরিমাণও। গত ২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে হাজার কোটির ঘর স্পর্শ করতে পারেনি ডিএসইর লেনদেন। খরা নিয়েই চলছে লেনদেন। ফলে বিনিয়োগকারীরাও তাদের পুঁজি হারিয়ে এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

আর দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া অল্প কয়েকদিনের মধ্যে নেয়া কমিশন সংক্রান্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। এদিকে গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর যোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও সংকট থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। বরং পুঁজিবাজার আগের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে আবারও সুদিন ফিরে আসবে এই আশায় বুক বাধছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে বিনিয়োগকারীদের সে আশা গত আড়াই মাসে ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে। মুলত গত আড়াই মাসে অধিকাংশ শেয়ারের নতুন করে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পুঁজি উধাও হয়ে গেছে।

তবে দেশের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে প্রচলিত শব্দ ‘আস্থাহীনতা’। বিনিয়োগকারীদের এই আস্থাহীনতা দূর করার জন্য ২০১০ সালের ধসের পর বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামও নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, দেখিয়েছেন। কিন্তু ড. খায়রুল হোসেনের দুর্বল আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) অনুমোদন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের কারসাজিকারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় পুঁজিবাজারের ‘আস্থা’ যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমন বাস্তবতায় নতুন সরকার গঠনের পর শিবলী রুবাইয়াতের পদত্যাগের পর নতুন সম্ভাবনায় মৌলভিত্তির কোনো পরিবর্তন না হলেও পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর মাত্র চার কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ১৫ শতাংশ বেড়ে ছয় হাজার পার হয়ে যায়। কিন্তু নতুন কমিশন গঠনের পর ধারাবাহিক দরপতনে বাজার আবার সরকার পতনের আগের দিনের অবস্থানে ফিরে এসেছে। গত দুই মাস ধরেই বিরতি দিয়ে দরপতন হচ্ছে। আবারও ফিরে এসেছে আস্থাহীনতা।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, আস্থাহীনতা দূর করতে হলে আইন কার্যকর করতে হবে। বাজারে যে কারসাজি বা ম্যানপুলেশন, সার্কুলার ট্রেডিং হয়, এসব যদি বন্ধ করা যায়, সুশাসন যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে আস্থা তৈরি হবে। যাদের তালিকাভুক্ত করা হবে তারা যদি উপযুক্ত কোম্পানি হয়, তাহলে মানের উন্নয়ন হবে। এটা তো রাতারাতি করা যাবে না, সময় লাগবে। বর্তমান রেগুলেটরের যে সমস্যা তারা এটা রাতারাতি করতে চাচ্ছেন। দ্রুত অ্যাকশন নিতে চাচ্ছেন।

দ্রুত অ্যাকশন নিতে গিয়ে বাজারে একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে, একটা ভুল সংকেত যাচ্ছে। তারা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলো নেওয়া উচিত, কিন্তু আমার মনে হয় মার্কেট প্লেয়ারদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সুসম্পর্কের মাধ্যমে একটু সময় নিয়ে এসব করা উচিত। শুধু আইনি ব্যবস্থা নিলে একটি দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, যা কাম্য নয়। মোট কথা মার্কেট প্লেয়ার, ব্রোকার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু করতে হবে। তবে শেষ কথা হচ্ছে, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং সেটা করতে পারস্পরিক সমঝোতা, মতৈক্যের মাধ্যমে।

এদিকে সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সব সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে। সেই সঙ্গে টাকার অঙ্কে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এছাড়া সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। পুঁজিবাজারের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ বা ১২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় ডিএসইর সব সূচকও কমেছে। চলতি সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৫১ দশমিক ২২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর ডিএসইএস সূচক কমেছে ৩০ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

ডিএসইতে সব সূচকের পতন হলেও বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৭২ কোটি ২ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৪২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৩টি কোম্পানির, কমেছে ৩০৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫১৮.৯০৫ পয়েন্ট বা ৩.৫০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩০২.৫৯ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ৩০৬.৮৬ পয়েন্ট বা ৩.৪০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭০৫.৬৯ পয়েন্টে। অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ২৬.৪ পয়েন্ট বা ২.৩৪ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ৩৪.০৫ পয়েন্ট বা ৩.৫৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ১০২.৯৩ পয়েন্টে এবং ৯২৬.৬৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ৩৬৬.৮৭ পয়েন্ট বা ৩.০৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৩৯.৩৫ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৬টি, কমেছে ২৩৭টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টির। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৪১ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩০ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ১১০ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৩১ টাকা বা ১০.১৬ শতাংশ।