পুঁজিবাজারে ৩৮ কার্যদিবসে ৩১ হাজার কোটি টাকা উধাও, সূচক উধাও ৫৩৩ পয়েন্ট

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি টানা দরপতনে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। ফলে দিন দিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। তবে বাজার স্থিতিশীল না করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা একেক দিন এক হঠকারী সিদ্ধান্তে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে পুঁজিবাজার। তবে বাজার কী ভাবে স্থিতিশীল করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ন্যূনতম ধারনা নেই বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারী সহ বিভিন্ন হাউজের ট্রেডাররা। অন্যদিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ব্যস্ত রয়েছেন তদন্ত কমিটি ও জরিমানা ইস্যুতে। এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৫৩৩ পয়েন্ট। এর মধ্যে গত চার কার্যদিবসে সূচক কমেছে ২৯৮ পয়েন্ট। সোমবার কমেছে ৩৪ পয়েন্ট, মঙ্গলবার কমেছে ৩৮ পয়েন্ট এবং বুধবার কমেছে ১৩২ পয়েন্ট, আজ রোববার কমেছে ৮৩ পয়েন্ট।
মুলত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে দরপতন থেকে বেরই হতে পারছে না পুঁজিবাজার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আট সপ্তাহের মধ্যে সাত সপ্তাহেই দরপতন হয়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলমান এই দরপতনকে পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার প্রতিফলন বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
আর অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সরকার বা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার উদ্যোগের কারণে বেকায়দায় পড়ছে কারসাজিকারী এবং সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। তাই সাজা থেকে বাঁচতে পুঁজিবাজারে পতনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই-তিন বছরে ফ্লোর প্রাইস এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারকে ধরে রাখা হয়েছে। বাজার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না, সেই কারণে বাজার সংশোধন দেখতে পাচ্ছি।’
পুঁজিবাজারে দরপতনের পেছনে কারসাজিকারীরা এক জোট হয়ে কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সংস্কারের মধ্যে বিগত সময়ের অপরাধে যাঁদের শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে, সেই ধরনের গ্রুপ সমন্বিত হয়ে এটাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। তারা চেষ্টা করে যাবে পুঁজিবাজারে পতন ত্বরান্বিত করে কমিশনকে চাপে ফেলতে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পুঁজিবাজারে লেনদেন হলো আট সপ্তাহ। এর মধ্যে সাত সপ্তাহেই দরপতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। এরপর চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সপ্তাহেও দরপতন অব্যাহত থাকে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউনূস সরকারের অধীনে প্রথম কর্মদিবস ১১ আগস্ট। তার আগের কর্মদিবস ৮ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি ৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, যা গত বৃহস্পতিবারে ঠেকেছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ১১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭ হাজার টাকায়। অর্থাৎ, এই সময়ে ৩৮ কর্মদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ৩১ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু বিদায়ী সপ্তাহেই মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।