শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: মুলত ‘কারসাজি’র ভীতিতে পুঁজিবাজার বিমুখ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কারসাজির শেয়ারের দাপটে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ভালো শেয়ারও বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম পড়ছে। যার ফলে পতন থামছে না দেশের পুঁজিবাজারে। মুলত দুই-একদিন বা দুই-এক সপ্তাহ নয় টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে দরপতন। ফলে পুঁজিবাজারের লাগামহীন পতন যেন রীতিমতো তান্ডবে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু পতনের শেষ কোথায়, এই কারসাজিতে কারা জড়িত, তা খুঁজে দেখার যেন কেউ নেই। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, দেশে যখন চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, অজানা অর্থনৈতিক শঙ্কা ছিল; তখনও পুঁজিবাজারে এই রকম পতনের তান্ডব দেখা যায়নি। এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, অর্থনীতিও ভালোর দিকে তারপরও পুঁজিবাজার নেমে এসেছে অশনি সংকেত।

এদিকে টানা পতনের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ‘ডিএসইএক্স’ ৮৪ পয়েন্ট সূচকের দরপতন হয়েছে। পাশাপাশি আজও ডিএসইর লেনদেন কমে চার’শ কোটির ঘরে। প্রায় ৩৫ মাসের মধ্যে ডিএসইএক্স সূচক এতটা নিচে নামল। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৫ মে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৮৮৫ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

তবে টানা দরপতনের পেছনে সুদের হার বেশি হওয়ায় তারল্য সংকট, বড় বিনিয়োগকারীদের সাইডলাইনে থাকা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার হুটহাট সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অপ্রয়োজনীয় ঘোষণা, ভালো কোম্পানির অভাব, গুজব, মার্জিন ঋণের ফোর্সড সেল ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় আসছে। তবে সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ, একটি স্বার্থান্বেষী পক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুঁজিবাজারে পতনের তান্ডব চালাচ্ছে। সরকারের উচিত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এর রহস্য উদঘাটন করা। তাদের অভিযোগ, যারা এতোদিন তাদেরকে পুঁজিবাজারে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন, তারাও এখন নিশ্চুপ। পুঁজিবাজারকে অশনি সংকেত মুক্ত করার কোনো উদ্যোগ তাদের নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। তাদের মতে, এভাবে একটি দেশের পুঁজিবাজার চলতে পারে না।

এ বিষয় জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, কারসাজি করে খারাপ শেয়ারের দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ভালো শেয়ারের দাম কমেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাজারের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন।

এছাড়া ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে যে কিছুটা দরপতন হতে পারে, এটা অনুমেয় ছিল। কিন্তু এখন যেভাবে বাজার পড়ছে, তার বড় কারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে।

পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের কাজই উঠানামা করা। তবে গত কিছু দিনে অনেক দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। এমনকি বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের দামও বেড়েছিল। এসব কোম্পানির শেয়ারদর এখন কমছে।

এছাড়া ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে দীর্ঘদিন বিনিয়োগ করে কোন লাভ না না পাওয়ায় দুর্বল শেয়ারের সাথে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার বিক্রি চলছে। এর ফলে টানা দরপতন হচ্ছে। এছাড়া তারল্যসংকটে পুঁজিবাজারে হাহাকার চলছে। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সূচক যেমনি কমেছে, আবারও বাড়বে। কারণ একটানা দরপতন স্থিতিশীল বাজারের লক্ষণ নয়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে। এই সময়ে সূচক কমেছে ৬৩৩ পয়েন্ট। মুলত গত ১১ ফেব্রুয়ারির পর টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। গত ১১ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম সপ্তাহে (১১-১৫ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর সূচক ১১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে।

ডিএসইর সূত্র মতে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ডিএসইতে ৪৬৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে আগের র্কাদিবসের তুলনায় ২১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা কম শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সোমবার ডিএসইতে ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই’র প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৮৪.১৩ পয়েন্ট বা ১.৪২ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৮১৪.০৯ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৭.৮৬ পয়েন্ট ১.৩৮ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৬৮.৩৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২২.৫ পয়েন্ট ১.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০.১১ পয়েন্টে। মঙ্গলবার ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ৩১৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ১৬৫.০১ পয়েন্ট বা ১.৬২শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭৫.১৫ পয়েন্ট বা ১.৬২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৩.৯৬ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ১৬.৩৯ পয়েন্ট বা ১.৪৯ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৩.৭২ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ৬৪.৬৪ পয়েন্ট বা ০.৫ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৬৫১.৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সিএসইতে ২১৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে ১৭০টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির। দিন শেষে সিএসইতে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার।