শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বড় ধরনের অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রজেক্টে এর জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহী। শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফ্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃক ‘ব্লু ইকোনমি: ফান্ডিং প্রসপেকটস অব ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফ্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশিদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ব্লু ইকোনোমি বা সুনীল অর্থনীতির জন্য সারা পৃথিবীতে বেসরকারি খাত ও পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক অর্থায়ন হচ্ছে। সমুদ্রসম্পদ বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। এতে সরকারি অর্থায়নের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং বেসরকারি খাতে অর্থায়নের সুযোগ বহু গুণ বাড়বে।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বড় ধরনের অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রজেক্টে এর জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহী। বিএসইসি পরিবেশবান্ধব প্রজেক্টে অর্থায়নের সুযোগকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এজন্য সকলকে ব্লু বন্ড, গ্রিন বন্ড নিয়ে ভাবতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অংশগ্রহণ করতে চায়।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, সুনীল অর্থনীতিকে যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব। বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা করতে হবে, কীভাবে সমুদ্রের সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব, কাজে লাগানো সম্ভব। সবকিছুর মধ্যেই সম্পদ আছে, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সম্পদের মাঝে থাকা সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। সম্পদকে ব্যবহার করে জিডিপিতে অবদান রাখতে হবে, উন্নত দেশ হয়ে ওঠার জন্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। সামষ্টিক অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক দেশে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখা যায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। কিন্তু, বাংলাদেশে সরকারের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা আছে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটানোর। সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ও অর্থায়নে এই ক্ষেত্রটিতে প্রাইভেট সেক্টরের অন্তর্ভুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্লু ইকোনমির উন্নয়নে প্রায় ২০টি মন্ত্রণালয় জড়িত আছে। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। বাংলাদেশে পলিসি ও আইনগত কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়েছে এবং বর্তমানে পলিসি অনুযায়ী বাস্তবায়ন প্রয়োজন। শুধু রপ্তানিকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের ব্লু ইকোনমির উৎপাদনকে আরো নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে।

সেমিনারের সভাপতি অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশিদ ‘বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা এবং সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশন দেন। তিনি সুনীল অর্থনীতি, বিভিন্ন অর্থনীতিতে ব্লু-ইকোনমির অবদান, সুনীল অর্থনীতির বৈশ্বিক অবস্থা, বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির অর্থনৈতিক মূল্য, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ, বাংলাদেশে উপকূল এলাকা ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে সরকারের গৃহীত জাতীয় পরিকল্পনা ও সুনীল অর্থনীতির কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফ্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম ও পদক্ষেপ, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুনীল অর্থনীতি, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এ সুনীল অর্থনীতি পরিকল্পনা ইত্যাদি উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে ‘ব্লু ইকোনমি: ফান্ডিং প্রসপেকটস অব ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুনীল অর্থনীতির নানা দিক তুলে ধরেন। বিশ্বজুড়ে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র এবং বাংলাদেশে তার সম্ভাবনাসমূহ তথ্য-উপাত্তসহকারে উপস্থাপন করেন মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি দেশের সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কীভাবে দেশের পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করা সম্ভব, তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।