শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাজার স্থিতিশীলকরণ ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ পাচ্ছে ১৭ ব্রোকারেজ হাউস। গতকাল মঙ্গলবার সিএমএসএফের পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৭টি ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে সিএমএসএফের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের শর্তে তাদের টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বুধবার পর্যন্ত যে ১৭টি ব্রোকারেজ হাউস তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পেতে আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে: মিডওয়ে সিকিউরিটিজ, রাস্তি সিকিউরিটিজ, মোনার্ক হোল্ডিংস, রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিস, বিনিময় সিকিউরিটিজ, বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ, বারাকা সিকিউরিটিজ, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ইমার্জিং গ্লোবাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, বেটাওয়ান ইনভেস্টমেন্ট, সিএএল বা ক্যাল সিকিউরিটিজ,

বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স, ম্যাট্রিক্স সিকিউরিটিজ, এসআইবিএল সিকিউরিটিজ, কাজী ইক্যুইটিজ এবং ইবিএল সিকিউরিটিজ।
এদের মধ্যে রিলায়েন্স ব্রোকারেজ, বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ ও বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল, পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স, এসআইবিএল সিকিউরিটিজ এবং ইবিএল সিকিউরিটিজ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস।

সিএমএসএফের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা করে মোট ৩৫ কোটি টাকা ঋণসহায়তা পাবে। বাকি ১০টি ব্রোকারেজ হাউস ২ কোটি করে মোট ২০ কোটি টাকা ঋণ পাবে। সব মিলিয়ে উল্লিখিত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেওয়া হবে। সিএমএসএফের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউসগুলো এই ঋণের বিপরীতে তহবিল কর্তৃপক্ষকে ৭ শতাংশ হারে সুদ দেবে। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নেবে ১ শতাংশ সেবা মাশুল বা সার্ভিস চার্জ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলো ৮ শতাংশ সুদে এই ঋণ পাবে।

পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সিএসএমএফ থেকে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের স্বল্প সুদে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তহবিলটির পরিচালনা পর্ষদ। এজন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করা হয়। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এই ঋণের বিপরীতে সিএমএসএফ কর্তৃপক্ষ ৯ শতাংশ হারে সুদ নেবে। পরে সুদহার কমিয়ে ৭ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঘোষণা দিয়েছিল যে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হবে। বিএসইসির ওই ঘোষণার পর সিএমএসএফ তহবিল থেকে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

মূলত ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর যাতে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে বিএসইসির পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিএমএসএফের ঋণের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ঋণসুবিধা নেওয়া ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকেও ঋণের সমপরিমাণ অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত ডিভিডেন্ড দিয়ে সিএমএসএফ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলের অবণ্টিত ক্যাশ ও বোনাসডিভিডেন্ড মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকার বোনাস শেয়ার ও ৭০০ কোটি টাকার ক্যাশ অর্থ রয়েছে। তহবিলে থাকা নগদ অর্থ থেকে এরই মধ্যে ২২৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আইসিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আরও ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠনে।

বাকি অর্থ থেকে এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যার মধ্যে প্রথম দফায় ৫৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়। সিএমএসএফ সূত্রে জানা যায়, শুরুতে ১৮০ দিন তথা ছয় মাস মেয়াদে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ঋণ দেওয়া হবে। পরে ঋণ পরিশোধের দক্ষতার ভিত্তিতে মেয়াদ বাড়ানো যাবে।