শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড ৩০ জুন, ২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৫৯ পয়সা। আগের বছর শেয়ার প্রতি ইপিএস ছিল ১ টাকা ৬৭ পয়সা। এককভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৯ টাকা ৩৩ পয়সা। কোম্পানিটির এজিএম ও ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট পরবর্তী নোটিসের মাধ্যমে জানানো হবে।

এদিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকা এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃত্রিম মুনাফা দেখানো হয়েছে। যাতে করে মুনাফা অনেক দেখানো হলেও সেভাবে লভ্যাংশ ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তবে এ করতে গিয়ে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে কোম্পানিটি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা পণ্য কেনার অজুহাতে যোগাযোগ করলে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় কয়েক মাস ধরে তাদের কারখানা বন্ধ রয়েছে। এরপর ডিএসই বিষয়টি কমিশনকে অবহিত করলে বিএসইসি তা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আলোকে গত ২৩ আগস্ট এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের আর্থিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনার জন্য বিএসইসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এবং সহকারী পরিচালক মো: আব্দুল আউয়ালকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

তবে তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট জমা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে ২২ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সময় বাড়ায় বিএসইসি। এরপরে গত ১৪ ডিসেম্বর আরেক দফায় সময় বাড়ালো বিএসইসি। এ দফায় ৬০ কার্যদিবস সময় বাড়ানো হয়েছে।

বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকা এই কোম্পানিটির পর্ষদ গত ৪ জানুয়ারি এক পর্ষদ সভা শেষে ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ১.৫৯ টাকা করে নিট মুনাফা দেখিয়েছে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। যা কৃত্রিম বলেই মনে করা হচ্ছে। কারন ব্যবসা বন্ধ থাকা কোম্পানির এই মুনাফা অসম্ভব। কোম্পানিটির যে কৃত্রিম মুনাফা দেখানো হয়েছে, সেটা স্পশ্ট হয়েছে লভ্যাংশে।

কাগজে কৃত্রিম মুনাফা দেখানো সম্ভব হলেও লভ্যাংশ দেওয়া যায় না। যে কারনে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১.৫৯ টাকা মুনাফা দেখালেও লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে মাত্র ১০ পয়সা। কৃত্রিম মুনাফা দেখাতে গিয়ে শাস্তির কবলে পড়তে হচ্ছে এসোসিয়েটেড অক্সিজেনকে। কারন মুনাফার ৩০% শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরনের বিধান রয়েছে। আর কোম্পানির পর্ষদ মুনাফার ৬ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর পরিপত্র অনুযায়ি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে মুনাফার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ আকারে শেয়ারহোল্ডারদেরকে দিতে হবে। যদি ৩০ শতাংশের কম দেওয়া হয়, তাহলে রিটেইন আর্নিংসে স্থানান্তর করা পুরো অংশ বা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া পুরোটার উপরে ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর আরোপ করা হবে।

এসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে ১ শতাংশ হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যা মুনাফার ৬.৩০ শতাংশ। বাকি ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৯৩.৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংসে রাখা হবে। মুনাফার ৭০ শতাংশের বেশি রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে এসোসিয়েটেড অক্সিজেনকে।

এসোসিয়েটেড অক্সিজেন কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজারে আসার আগেও দূর্ণীতির আশ্রয় নেয়। এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০০১ সালে ১১২ শতক বা ৩.৭৩ বিঘা জমি কেনা হয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে। এই জমি উন্নয়ন করতে ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার অস্বাভাবিক ব্যয় দেখায়। জমির দলিল সাবমিট করানোর প্রয়োজন পড়ায় এক্ষেত্রে প্রতারনার সুযোগ থাকে না। তবে উন্নয়ন নিয়েই সাধারনত প্রতারনতা করা হয়। এখানে উন্নয়ন বাবদ ব্যয় দেখিয়ে পরিচালকদের মালিকানা বাড়ায়।

১২ লাখ টাকার এসোসিয়েটেড অক্সিজেন আইপিওতে আসার আগে রাতারাতি ৮০ কোটি টাকা হয়ে যায়। ৮০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রায় পুরোটাই বা ৯৯.৮৫ শতাংশ ২০১৭ ও ১৮ সালে ইস্যু করে এসোসিয়েটেড অক্সিজেন। এর আগে মাত্র ১২ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন ছিল। এই কোম্পানিটিই ২০১৮ সালের শেষে (৬ নভেম্বর) ৭০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার ইস্যু করে। ১৭ ও ১৮ সালে পরিচালকেরা নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে অনেক প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করে। এরপরেও ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য শেয়ারবাজারে আসে।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, এসোসিয়েটেড অক্সিজেনে ৫ সদস্যের এক অদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন ২০ বছরের এইচএসসি যোগ্যতার মো. আজমাইন মাহতাব চৌধুরী এবং ‘এ’ লেভেল যোগ্যতার ২০ বছর বয়সী ফাহিম চৌধুরী। শিক্ষাগত এইচএসসি যোগ্যতার এই পরিচালকদের আবার ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতা আছে বলে উল্লেখ করা হয়। এমন অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারনে তালিকাভুক্তির পরে বন্ধ হয়ে গেছে তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং।

এছাড়া এইচএসসি যোগ্যতার মো. আজমাইন মাহতাব চৌধুরী কোম্পানির এডমিন এবং এইচআর ম্যানেজমেন্ট ও ‘এ’ লেভেল যোগ্যতার ফাহিম চৌধুরী ইন্টারনাল অডিট ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। এবং সার্ভিস যেমনই দেক না কেনো, ভালো সম্মানিও নিচ্ছেন।

১৯৯০ সালের ২৭ জুন প্রাইভেট কোম্পানি হিসাবে গঠিত এসোসিয়েটেড অক্সিজেন ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল পাবলিক কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয়। যে কোম্পানিটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯২ সালের ১ ডিসেম্বর। কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ১৫ কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।