শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেছেন, জনগণের দোড়গোড়ায় ডিএসই’র সেবা পৌছে দেয়ার পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধশালী এবং টেকসই পুঁজিবাজার বিনির্মাণে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই। রোববার (১০ ডিসেম্বর) গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিসের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক কর্মশালায় রাখা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কর্মশালাটি আয়োজন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেনিং একাডেমি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসি’র কমিশনার মোঃ আব্দুল হালিম এবং ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এবং ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান জনাব তন্ময় বর্মন, ফ্যাকালটি অব বিজনেজ স্ট্যাডিজ এর ডিন ড. ইশিতা রায় এবং ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, সিপিএ ও বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ফ্যাক্যালটি অব বিজনেজ স্ট্যাডিজের ডিন ড. ইশিতা রায় এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান সিপিএ।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেন, আজকে আমরা খুশি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমরা কথা বলতে পারছি। বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিএসই’র বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা বিএসইসি, ডিএসই এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আইওএসকোর কার্যক্রমের একটি অংশ‌। এতে করে আর্থিক বিনিয়োগের পরিবেশ ও সময় ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়৷ তাই আইওএসকোর সদস্য হিসেবে আমরা সারাদেশে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছি।

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশব্যাপী বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যাতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ঝুঁকি এড়িয়ে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করে। জনগণের দোড়গোড়ায় ডিএসই’র সেবা পৌছে দেয়ার পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধশালী এবং টেকসই পুঁজিবাজার বিনির্মাণে নিরন্তরকাজ করে যাচ্ছে ডিএসই৷

বিশেষ অতিথি বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম বলেন, আজকের যে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি অনুষ্ঠান, তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়। এটা সবার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। আজকে এখানে যারা ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন তারা হয়ত এখনো কোনো উপার্জনে নেই। কিন্তু আমরা আজকে আপনাদের ভবিষ্যতের বিনিয়োগ নিয়ে কিছু কথা বলব‌‌। একজন মানুষ যা আয় করে, তা থেকে সব খরচের পরে যে বাড়তি অর্থ থাকে সেটাই বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগের ফলে জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি তাতে আমরা কত শতাংশ সেভিংস করতে পারি তাতে অবদান রাখে। আগে আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সেটা ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। আর আজকে সেটা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, একটি গতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য দরকার উন্নত তথ্য প্রযুক্তি, মানসম্পন্ন পণ্য, সুশাসন, দক্ষ জনশক্তি এবং শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী। ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের মাধ্যমেই উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইক্যুইটির পাশাপাশি নতুন পণ্যভিওিক বৈচিএময় বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে আমাদের বিনিয়োগকারীদেরও বিনিয়োগ জ্ঞ্যান বাড়াতে হবে এবং সচেতন হতে হবে।

প্রধান অতিথি ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে এই লিটারেসি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস রুমের বাইরেও অনেক কিছু শিখতে পারবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অনেক মজবুত। একটি দেশের পুঁজিবাজার যতটা উন্নত, সে দেশের অর্থনীতি ততটা ভালো। একটি ভালো পুঁজিবাজার ছাড়া ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেজন্য ডিএসইর আজকের এ আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, বর্তমানে উন্নত বিশ্বে সবাই সবার সঙ্গে ব্যবসা করছে। যা থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের মেগা প্রকল্পগুলো পুঁজিবাজারে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। এতে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের অনেক উন্নতি হবে। যে দেশ যত বেশি উন্নত, সে দেশে তত বেশি বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। যার একটি বাংলাদেশ, কারণ বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুবিধা দেয়া হয়। এতে বাংলাদেশের জিডিপি যেমন বাড়বে তেমনি মানুষের আয়ও বাড়বে‌। সুদৃড় অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে। আর এ জন্য ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি ও পুঁজিবাজার সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এবং ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান তন্ময় বর্মন অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে বলেন,ফাইন্যান্স ও বিজনেস বিভাগের ছাত্র হিসেবে আমরা সবাই ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি সম্পর্কে কিছুটা অবগত আছি। তবে এ বিষয়টি প্রতিনিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদি আমাদের পুঁজিবাজারের দিকে লক্ষ্য করেন, তবে দেখবেন যে আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ রিউমার বা গুজব কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। যেখানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন মার্জিন ঋণ নিয়ে থাকা বিনিয়োগকারীরা। কারণ তাদের মধ্যে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসির জ্ঞান খুবই কম, যে কারণে আমরা ১৯৯৬ ও ২০১০ এর মত দুটি ঘটনা দেখেছি। ঘটনাগুলো হয়েছে শুধু মাত্র ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি সম্পর্কে না জানার কারণে। যে কারণে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পরে পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আল আমিন রহমান। মূল প্রবন্ধে তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন।