শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি আমরা নেটওয়াকর্সের পরিচালনা পর্ষদ পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর লক্ষ্যে রাইট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুলত কোম্পানিটি প্রতি দুইটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সাথে ২০ টাকা প্রিমিয়াম নিবে কোম্পানিটি।

তবে কোম্পানিটি ২০১৭ সালে  পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। পরের বছর ২০১৮ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখানো হয় ৪ টাকা ০১ পয়সা। তার পরের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস হয় ৪ টাকা । তারপর থেকে থেকেই মুনাফায় ধারাবাহিকা পতন হয়। ২০২১ সালে ইপিএস কমে দাঁড়ায় ২ টাকা ১৪ পয়সায়। পরের বছর ২০২২ সালে আরও কমে হয় ১ টাকা ৮৫ পয়সায়।

তবে এ বছর ২০২৩ সালে অর্থাৎ ৩০ জুন, ২০২৩ অর্থবছরে রাইট শেয়ার ইস্যুর ছোঁয়ায় কোম্পানিটির মুনাফায় ঝলক দেখা যায়। এ বছর কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। যা আগের বছর ডাইলুটেড ছিল ১ টাকা ৭৬ পয়সা।

মুলত বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড। প্রোসপেক্টাস অনুসারে, শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি। তার রিপরীতে আইপিওতে পুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ ৭ টাকা তুলে নেয়। ২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া পারিবারিক কোম্পানিটির ৬ বছরে শেয়ারের পরিমাণ হয়েছে ৫ গুণ।

অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি শেয়ারের বিপরীতে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৮টি। বোনাস শেয়ারের নামে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ মুলধন বৃদ্ধি করেছে ৫ গুণ। তবুও মুনাফা করতে না পারায় বোনাস শেয়ারের নামে শুধুই ‘বিনিয়োগকারী ঠকিয়েছে। সেই আমরা নেটওয়ার্কস নতুন করে ফাঁদ পেতেছে। কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ২:১ হারে রাইট শেয়ার রাইট শেয়ার ইস্যু করবে বলে সোমবার (২১ আগস্ট) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রাইট শেয়ার স্যুর সুবাদে কোম্পানিটি এ বছর নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের খবর দিয়েছে। আগের বছর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল ২৫ অক্টোবর। তার আগের বছরগুলোতেও অক্টোবর মাসের আগে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে দেখা যায়নি কোম্পানিটিকে। তবে এবার দুই মাস আগে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের খবর দিয়েছে। এ বছর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে নতুন দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে। এ বছর এটিই জুন ক্লোজিংয়ের প্রথম কোম্পানি, যেটি বিনিয়োগকারীদের প্রথম ডিভিডেন্ড ঘোষণার স্বাদ দিল।

তবে কোম্পানিটি এ বছর মুনাফায় ঝলক দেখালেওডিভিডেন্ড ঘোষণায় মোটেও উদার হয়নি। কারণ আগের বছর ১ টাকা ৭৬ পয়সা ইপিএসের বিপরীতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস মিলে ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। আর এ বছর ৩ টাকা ৬৪ পয়সা ইপিএসের বিপরীতে ১১ শতাংশ ক্যাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

যে কারণে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির মুনাফাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রাইট শেয়ার জাস্টিপাই করার জন্যই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ কী অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখানোর আশ্রয় নিয়েছে! আমরা নেটওয়ার্কস ২০১৭ সালে ৩৫ টাকায় ইস্যু মূল্যে শেয়ারবাজার থেকে ৫৬ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করেছিল। ওই টাকা থেকে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ ও বাকি টাকা দিয়ে আইটি খাতের বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যবহার করার কথা ছিল।

এমন উচ্চ প্রিমিয়ামে টাকা উত্তোলন করা কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড বরাবরই ১০ শতাংশে আটকে থাকে। গত ৭ বছরের মধ্যে ৫ বছরই কোম্পানিটি ১০ শতাংশ করে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যা কাট-অফ প্রাইসের তুলনায় ২.৫৬ শতাংশ। ব্যাংকের এফডিআর করলে এর চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যায়- এমন অভিমত বিনিয়োগকারীদের।

প্রসঙ্গত, কোম্পানিটি ২টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ১টি রাইট শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিটি রাইট শেয়ারে ২০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩০ টাকা ইস্যু মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমানে মোট শেয়ার রয়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৮টি। বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৬১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮০ টাকা।

সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২:১ হারে রাইট শেয়ার অর্থাৎ বিদ্যমান প্রতি ২টি শেয়ারের বিপরীতে ১টি রাইট শেয়ার ইস্যু করা হবে। রাইট শেয়ারের অফার মূল্য হবে ৩০ টাকা। অর্থাৎ ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ২০ টাকা করে প্রিমিয়াম নেয়া হবে। রাইট শেয়ারের মাধ্যমে সংগৃহীত টাকা কোম্পানিটি বিএমআরই (নেটওয়ার্কিং সিস্টেম আপডেট, নেটওয়ার্কের আওতাধীন এলাকা সম্প্রসারণ) ও আংশিক ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করবে।

রাইট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্তের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নিতে আগামী ৪ অক্টোবর কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় তা উত্থাপন করা হবে। শেয়ারহোল্ডাররা সম্মতি দিলে রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমতি চেয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করবে আমরা নেটওয়ার্কস। বিএসইসির অনুমোদন পেলে সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।