শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও আস্থা সংকট কাটছে না। প্রশ্ন হলো কেন পুঁজিবাজার আস্থা সংকট। এই আস্থা সংকটের পেছনে মুল কারণ দুটো: এর মধ্যে একটি হলো দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা। অন্যটি হলো দুর্বল শেয়ারের রাজত্ব থাকলেও ভালো শেয়ারের দাম বাড়ছে না। এর ফলে একদিকে আস্থা সংকট বাড়ছে, অন্যদিকে তারল্য সংকটে ঘুরে দাঁড়াতো পারছে না পুঁজিবাজার।

এমনকি আজ ডিএসইতে সূচক বাড়লেও টাকার অংকে লেনদেন কমেছে ৮২ কোটি টাকা। মুলত আস্থা সংকটে মুল কারণ পুঁজিবাজারে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে। এছাড়া ভালো মৌল ভিত্তি কোন কোম্পানির আইপিও আসছে না। এদিন ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেন ৩০০ কোটির ঘরে নেমে গেছে। যা গত ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমে তলানিতে ঠেকেছে। ফলে বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজার। আর তাতে পুঁজি হারা বিনিয়োগাকীদের মধ্যে চলছে শুধু হাহাকার। এ অবস্থায় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে একটু ইতিবাচকভাবে পার করেছেন তারা।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মুল সমস্যা আস্থা সংকট। তারল্য সংকটের চেয়ে বেশি আস্থা সংকটের ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বিশেষ করে বর্তমানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট চরমে। পুঁজিবাজারের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্রুত বাজার স্থিতিশীল না করতে পারলে বিনিয়োগকারীদের আাস্থা সংকট চরম পৌঁছবে। তাই যে কোন মুল্যে বিএসইসির আস্থা সংকট ও তারল্য সংকট দুর করা উচিত।

বিনিয়োগকারীরা আরো বলেন, বাজারে ভালো মৌল ভিত্তি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে। দুর্বল ও দীর্ঘদিন ধরে ডিভিডেন্ড দেয় না এমন কোম্পানির পুঁজিবাজারে রাজত্ব। তাই আস্থা সংকটের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী নতুন করে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। তাই বাজার ঘুরে দাঁড়ালো অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নতুন করে বিনিয়োগমুখী হবে। এখন বিএসইসি কী ভাবে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করবে এটাই দেখার বিষয়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩১৫ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে।

ডিএসইর তথ্য মতে, আজ বাজারে ৩৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৭ কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭৭ শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। এতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৮ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে। এদিন দাম বেড়েছে ১১০টি কোম্পানির শেয়ারের, বিপরীতে কমেছে ৫২টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৫টির।

আজ ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। ডিএসইর আজকের লেনদেন চার মাস ৯ দিন বা ৮৫ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে চলতি বছরের ২৯ মার্চ আজকের চেয়ে কম অর্থাৎ ৩৮২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। ডিএসইতে আজ ৩৩৭টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১১০টির বা ৩২.৬৪ শতাংশের। এছাড়া দর কমেছে ৫২টির বা ১৫.৪৩ শতাংশের এবং শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৫টির বা ৫১.৯৩ শতাংশের।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৮.১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৬২.৫৫ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলো মধ্যে সিএসসিএক্স ২৭.৭৭ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ৩.১১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৪০.৪৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই ৩.০৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১৫৬.৪০ পয়েন্টে, এক হাজার ৩১০.৬৬ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৫৯.৮৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৭২.৩৭ পয়েন্টে।

সিএসইতে আজ ১৫৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫৩টির, কমেছে ৩৮টির এবং ৬২টি কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।