শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে অর্জিত আয়ের ওপর কর আরোপ (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) করা হচ্ছে সম্প্রতি এমন গুজব ছড়ানো হয়। ফলে গত ৬ জুন পুঁজিবাজারে বড় দরপতন ঘটে। আর ওই গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, ওই দিন যেসব ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ইচ্ছেকৃতভাবে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়ে বাজারকে পতনমুখী করো হয়েছিলো তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে গুজব রটনাকারীদের অনুসন্ধানে আগামী মঙ্গলবার (২০ জনু) শীর্ষ ব্রোকারদের তলব করেছে বিএসইসি।

সম্প্রতি বিএসইসির অ্যাসিসটেন্ট পরিচালক মো. ফয়সাল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শীর্ষ ব্রোকারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার কমিশনের বোর্ড রুমে বেলা ১২টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
চলতি মাসের ৬ তারিখে দিনে শেষ সূচক ছিলো ৬৩৫৬ পয়েন্ট। পরে দিন ইতিবাচক ধারায় শুরু হয়েছিলো লেনদেন।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন আয়কর আইন নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়। নতুন আয় কর আইনের গুজবে সেদিন ৪০ পয়েন্ট কমে যায়। বৃহস্পতিবার দিন শেষে সূচক অবস্থান করে ৬২৮০ পয়েন্টে। এদিকে, নতুন আয়কর আইনেও ক্যাপিটাল গেইন করের আওতামুক্ত রয়েছে। সব দিক বিবেচনা নিয়ে আগামী ২০ জুন বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ ব্রোকারদের নিয়ে বিএসইসি বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএসইসি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে একটি কুচক্রী মহল পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে আসছে। এর আগে দুজন ব্যক্তিকে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশন। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে যারা পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।

এদিকে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর রেয়াত সুবিধা বহাল রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের অর্জিত লভ্যাংশ আয়ের ওপর উৎসে কর কাটা হবে না। এনবিআরের নতুন আইনে এসব সুবিধা বহাল রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ রহিত করে নতুনভাবে প্রণয়নকল্পে বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়। জাতীয় সংসদের বিল নং- ২১/২০২৩। ইতিমধ্যে বিলটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) অধীনে পরিচালিত কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে সাধারণ কর রেয়াত প্রযোজ্য হবে।

অর্থাৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় করের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া, বিএসইসির স্বীকৃত মিউচুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (এটিবি), রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) আয়কে মোট আয় পরিগণনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয় বা ক্যাপিটাল গেইন আগের মতো করের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া, মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লভ্যাংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে যে উৎসে কর কাটা হতো, তা আগামীতে হবে না।

এতে করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আয় বাড়বে এবং বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সহায়ক হবে। আর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স নিয়ে পুঁজিবাজারে যে গুজব ছাড়ানো হয়েছিল, তা অসত্য বলে প্রমাণীত হয়েছে। পুঁজিবাজারসহ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে।