শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের লভ্যাংশের মৌসুম। তবে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ভালো লভ্যাংশ দিলেও এর প্রভাব নেই। বরং লভ্যাংশ ঘোষণার পর আরো দরপতন ঘটে। সম্প্রতি বছরগুলোতে ব্যাংক খাতের শেয়ারে বোনাস শেয়ার দেওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

একই সঙ্গে বেড়েছে সার্বিকভাবে লভ্যাংশ দেওয়ার হারও। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিলেও তেমন আকৃষ্ট করতে পারছে না পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের। ফলে ভালো লভ্যাংশের প্রভাব পড়ছে না ব্যাংকের শেয়ার দামে।

ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে না পারার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজার এখন অনেকটাই আইটেম নির্ভর হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন দ্রুত মুনাফা পাওয়ার আশায় বিনিয়োগ করছেন, লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় নয়। বিনিয়োগকারীদের এ আচরণ যুক্তিসঙ্গত নয়। এভাবে আইটেম নির্ভর বিনিয়োগ করলে লাভের বদলে লোকসানের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

এদিকে সমাপ্ত অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চার ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ অর্থবছরের জন্য ৮০৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৫৫২ কোটি ৮ লাখ টাকা। বাকি ২৫৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বোনাস ডিভিডেন্ড। ব্যাংক চারটি সমাপ্ত অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এর বিপরীতে আলোচ্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকগুলো হলো: প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে প্রাইম ব্যাংক। এই ব্যাংকটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১৭.৫০ শতাংশ হারে ১৯৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছে। যা কোম্পানিটির ২০২২ সালে অর্জিত মুনাফার ৪৯.৫৭ শতাংশ। ব্যাংক চারটি থেকে এবার ২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ২১৩টি বোনাস শেয়ার দেওয়া হবে।

অথচ এ ভালো লভ্যাংশের পরও ব্যাংক খাতের ছয় ব্যাংকের শেয়ার দর বর্তমানে ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। ব্যাংকগুলো হলো: এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এবি ব্যাংক : গত ১১ এপ্রিল বুধবার সর্বশেষ ৯ টাকা ৯০ পয়সা দরে এ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের দর ৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৯০ পয়সায় ওঠানামা করে। ১৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের এবি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৮৬০ কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ নগদ ও ৩ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। ব্যাংকটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যাংকটির বর্তমান পিই রেশিও ১১.৫১।

ব্যাংকটির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ১৯৮৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির এবি ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ০ দশমিক ৫৭ শতাংশ সরকারের কাছে, ২২ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ৪৪ দশমিক ০৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক : গত ১১ এপ্রিল বুধবার সর্বশেষ ৯ টাকা ৮০ পয়সা দরে এ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের দর ৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২ টাকায় ওঠানামা করে। ৩০০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১ হাজার ৪৬ কোটি ১ লাখ টাকা। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ

নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। ব্যাংকটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ৯৮৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ব্যাংকটির পিই রেশিও ২.৯২।
ব্যাংকটির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ০২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বিদেশি ও ৪৬ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক : গত ১১ এপ্রিল বুধবার সর্বশেষ ৯ টাকা দরে এ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের দর ৯ টাকা থেকে ৯ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠানামা করে। ২০০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৯৪০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

ব্যাংকটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ৭২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ব্যাংকটির পিই রেশিও ৬.৪৩। ব্যাংকটির কোনো ঋণ নেই। ২০২২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এন’ ক্যাটাগরির গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৪৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ২৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক : গত ১১ এপ্রিল বুধবার সর্বশেষ ৫ টাকা ৪০ পয়সা দরে এ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের দর ৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠানামা করে। ১৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্যাংকটির রিজার্ভ ঋণাত্বক রয়েছে ১ হাজার ৮৭০ কোটি ১১ লাখ টাকা। ব্যাংকটির পিই রেশিও জানা যায়নি।

ব্যাংকটির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ৪৭৯ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৫২ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ০ দশমিক ১৭ শতাংশ সরকারের, ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক : গত ১১ এপ্রিল বুধবার সর্বশেষ ৮ টাকা ৮০ পয়সা দরে এ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের দর ৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠানামা করে। ১৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১ হাজার ৬২ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ৩ শতাংশ নগদ ও ৩ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ব্যাংকটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ৬৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ব্যাংকটির পিই রেশিও ১১.৭৩। ব্যাংকটির কোনো ঋণ নেই। ২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বি’ ক্যাটাগরির স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৩৬ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ০ দশমিক ৩৮ শতাংশ বিদেশি ও ৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

ইউনিয়ন ব্যাংক : গত ১১ এপ্রিল বুধবার সর্বশেষ ৯ টাকা ৩০ পয়সা দরে এ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের দর ৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠানামা করে। ২০০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৯৮৬ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস (পেন্ডিং) লভ্যাংশ দিয়েছিল। ব্যাংকটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। ব্যাংকটির পিই রেশিও ১০.৫৭।

ব্যাংকটির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এন’ ক্যাটাগরির ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৫৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।