শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড-এ নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে নাটকীয়তার যেন শেষ হচ্ছেই না। গত জুলাই মাসে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (আইন) এসএম শাকিল আখতার এবং ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পর্ষদের পরিচালক জেয়াদ রহমানের স্বাক্ষরকৃত একটি আপোষনামা এবং একটি অঙ্গীকারনামা আপিল বিভাগে জমা দিয়েছে আইডিআরএ।

অঙ্গীকারনামাটি হবার পর থেকেই দৈনিক প্রথম আলো সহ দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় খবর আসে যে, নতুন পরিচালনা পর্ষদে থাকছেন হাফিজ আহমেদ মজুমদার, প্রফেসর ডঃ মোঃ জুনায়েদ শফিক, সুরাইয়া রহমান, আদিবা রহমান, জেয়াদ রহমান, সাকিব আজিজ চৌধুরী, চাকলাদার রেজানুল আলম, সাকিব আজাদ। কিন্তু অঙ্গীকারনামার আইনী ভিত্তি এবং অন্য শেয়ারহোল্ডারদের সংক্ষুব্ধ হবার বিষয়টি আদালতের নজরে আসার পর অঙ্গীকারনামাটি পুনরায় সংশোধনের জন্য আপিল বিভাগ সময় দেন।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে যে, আরো বেশ কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার অঙ্গীকারনামার ফলে সংক্ষুব্ধ হয়ে আইডিআরএ-র কাছে চিঠি দিয়েছে। এরই মধ্যে গেল (১৭ আগস্ট) আইডিআরএ-র নিযুক্ত এ্যাডভোকেট শেখ মোর্শেদ (অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল)-কে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আইডিআরএ।

জানা গেছে যে, শেয়ারহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করে তৈরি আপোষনামার এবং অঙ্গীকারনামার আইনী ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। অঙ্গীকারনামার আইনী ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর আইডিআরএ কর্তৃক এ্যাডভোকেট-কে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

উল্লেখ্য যে, গেল বছর ১১/০২/২০২১ তারিখে মেসার্স হাওলাদার ইউনুস এবং মেসার্স ফেমস এন্ড আর-দুইটি অডিট ফার্মের রিপোর্টে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রাপ্তির পর ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে আইডিআরএ। তবে, সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের একই পরিবার থেকেই তিনজন থাকছে নতুন পর্ষদে।

উল্লেখিত আপোষনামায় বীমা আইনের ৭৬ ধারা লঙ্ঘন করে কোন স্পন্সর ডিরেক্টর না রেখেই পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২১ মে ২০১৯ খ্রিঃ- এর স্মারক অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে ৩০% শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোন প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করেই মাত্র ১৯.১৭ শতাংশ শেয়ার ধারকদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার জন্য আপোষ করা হয়েছে।

এছাড়া একই পরিবার কর্তৃক ১০ শতাংশ এর অধিক শেয়ারধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়েই তাদের পরিচালনা পর্ষদে জায়গা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড-এ ১৫ জন ২ শতাংশ শেয়ারধারী থাকলেও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মাত্র ৮ জনকে নিয়ে কীভাবে আপোষনামায় স্বাক্ষর করেছে সে বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেয়ারহোল্ডারগন।

জানা গেছে যে, নতুন পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে সুরাইয়া রহমান, জেয়াদ রহমান এবং আদিবা রহমান একই পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে সুরাইয়া রহমান এবং জেয়াদ রহমান পূর্বের সাসপেন্ডেড বোর্ডের সদস্য। এছাড়াও জনাবা আদিবা রহমান প্রাক্তন সিইও।

উল্লেখ্য যে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিঃ তারিখে দুইটি এক্সটারনাল অডিট ফার্মের রিপোর্টের ভিত্তিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে আজিজ হালিম চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস এবং একনাবিন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস নামক দুইটি অডিট ফার্ম-কে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

উক্ত অডিট ফার্ম দুটির রিপোর্টে জনাব মন্জুরুল রহমান এবং তার পরিবার কর্তৃক বীমা আইন, ২০১০ এর ৭৬ ধারা ও বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা, ২০১৬ এর ৩(৫) এবং ৪ (১), (২) এবং (৩) বিধি ভঙ্গ করে ১০ শতাংশ এর অধিক অর্থ্যাৎ ২২.৭৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ, কোম্পানী আইনের ৮৫ ধারা লঙ্ঘন করে সাধারণ কর্মচারীগন ভোট প্রদান, সেন্ট্রাল ডাটাবেজ থেকে পলিসিহোল্ডারদের ডাটা ডিলিট, ভ‚য়া পলিসি নাম্বার তৈরি করে কোম্পানী থেকে টাকা উত্তোলন, সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাকি প্রভৃতি অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

উক্ত অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ডাটা ডিলিটের একটি মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৬৩৮ কোটি টাকার অনিয়ম, দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিং-এর তদন্ত চলমান রয়েছে। জনাব জিয়াদ রহমান, জনাবা আদিবা রহমান ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলায় অভিযুক্ত হলেও এখনো আদালতে জামিন পান নি বলে জানা গেছে।