শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আয় কমে যাওয়া বিবিধ খাতের কোম্পানি ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কেবল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকরা এবার কোনো লভ্যাংশ নেবেন না। আগের বছর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৬ টাকা ৭৮ পয়সা।

আর এবার তা হয়েছে ৫ টাকা ৬৩ পয়সা। এই হিসেবে এবার ২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছে। উদ্যোক্তা পরিচালকরা লভ্যাংশ না নেয়ায় প্রায় দুই কোটি শেয়ারের বিপরীতে বিতরণ করা হবে ৫ কোটি টাকার মতো।

এ ডিভিডেন্ড কেবল সাধারণ বিনিয়োগকারী পাবে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ডিভিডেন্ড গ্রহণ করবে না। ঘোষিত ডিভিডেন্ড হবে কোম্পানিটির মোট আয়ের ১৮.৭৫ শতাংশ বা ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪০ টাকা। ডিভিডেন্ড দেওয়ার পর মুনাফার বাকি ৮১.২৫ শতাংশ বা ২১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ৪ টাকা কোম্পানির রিজার্ভে থেকে যাবে।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ি, সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ২৬ কোটি ৬০ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪ টাকা। ডিভিডেন্ড বাবদ ব্যয় হবে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪০ টাকা বা ১৮.৭৫ শতাংশ। বাকি ২১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ৪ টাকা বা ৮১.২৫ শতাংশ মুনাফা থাকার পরও কোম্পানিটির পরিচালকরা কেন ডিভিডেন্ড নিচ্ছেন না-এমন প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের। তাহলে পরিচালকরা কোম্পানিটির মালিকানায় থেকে লাভ কি? তাহলে কী বড় ডিভিডেন্ডের স্বপ্ন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঘুমে রেখে অন্য পন্থায় ফায়দা লুটবে? এমনও প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা বছরশেষে কোম্পানিটির মুনাফার একটি অংশ বিনিয়োগকারীদের সাথে পরিচালকরাও পাবেন। এটাই কোম্পানিটির উদ্যোক্ত পরিচালকের আয়। এর বাইরে কোম্পানিটি থেকে অন্য কোনভাবে পরিচালকদের আয় করার আইনগত সুযোগ নাই। কিন্তু ইনডেক্স এগ্রো কোম্পানিটি শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। বড় মুনাফা থাকার পরও পরিচালকদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। তাহলে কোম্পানিটিতে পরিচালকরা বিনিয়োগ করে তাদের পায়দাটা কি? প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের।

এ বিষয়ে আব্দুর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ইনডেক্স এগ্রোর পরিচালকরা যেহেতু নিজেরা কোন ডিভিডেন্ড নেবেনা, শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিবে, তাহলে পরিচালকদের এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লাভ কি? তাহলে কি তাদের অন্য কোন ধান্দা রয়েছে? ডিভিডেন্ডের ৮১ শতাংশের বেশি তারা রিজার্ভের জন্য রেখে নিজেরা ডিভিডেন্ড নিচ্ছে না, তাহলে কি তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে অন্য কোন মাধ্যমে নিজেদের পায়দা আদায় করে নেবে? তিনি বলে, কোম্পানিটির এমনিতেই ভালো রিজার্ভ রয়েছে। ডিভিডেন্ডের সিংহভাগ টাকাও রিজার্ভে দেওয়া হবে। কী উদ্দেশ্যে এবং কেন এতো রিজার্ভ রাখা হবে?

বড় প্রিমিয়াম নিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই কোম্পানিটির আয় কমেছে। তার মানে কোম্পানিটির পরিচালকদের অন্য কোন খারাপ চিন্তা রয়েছে। যার কারণে সাধারণ বিনিয়োকারীদের ডিভিডেন্ড দিয়ে নিজেরা ডিভিডেন্ড না নেওয়া কৌশলে রয়েছে।

এ বিষয়ে আরিফ হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ারনিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে বেশিরবাগ কোম্পানির পরিচালকরাই নামে বেনামে বিও হিসাব খুলে শেয়ার ব্যবসা করে। কোম্পানিটির পরিচালরা ডিভিডেন্ড না নিয়ে শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দিয়েছে। বাকি টাকা নিজেরা না নিয়ে রিজার্ভে রাখবে।

এতে করে কোম্পানিটির প্রতি বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি ঝুঁকবে। এতে করে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়তে থাকবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে শেয়ার দর বাড়িয়ে কোম্পানিটির পরিচালরা শেয়ার বিক্রি করে ফায়দা লুটার জন্যও এমনটা করতে পারে।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসেইসি) নজরে পড়া একটু কঠিন হলেও তা নজরে রাখা দরকার। তবে কোম্পানিটির পরিচালকরা কেন ডিভিডেন্ড না নিয়ে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে তা ক্ষতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এছাড়াও বাজারে এসেই কোম্পানিটির আয় কমেছে। তাহলে কি কোম্পানিটি বাজারে আসার আগে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভবে আয় বেশি দেখিয়েছে?

৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৫ টাকা ৬৩ পয়সা। আগের বছর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। উদ্যোক্তা পরিচালকরা ডিভিডেন্ড না নেয়ায় প্রায় দুই কোটি শেয়ারের বিপরীতে বিতরণ করা হবে ৫ কোটি টাকার মতো। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছিল ৭ টাকা ৭ পয়সা।

ডিভিডেন্ড চূড়ান্ত করতে কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ অক্টোবর। কোম্পানিটি বার্ষিক সাধারণ সভা করবে আগামী ৯ ডিসেম্বর। কোম্পানিটির মোট শেয়ার রয়েছে ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৯টি। এরমধ্যে ২ কোটি ৭২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৩টি শেয়ার বা ৫৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন উদ্যোক্তা-পরিচালকরা।

বাকি ১ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ২১৬টি বা ৪২ দশমিক ২৩ শতাংশ ধারণ করছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যাদের মধ্যে ডিভিডেন্ড বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২২.৭৫ শতাংশ। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৯.৪৮ শতাংশ। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা তুলেছে। প্রতিটি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৫০ টাকা করে আর প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্য বিনিয়োগকারীরা পেয়েছে ৬২ টাকা করে।

সমাপ্ত অর্থবছরে আয় কমলেও সম্পদমূল্য বেড়েছে কোম্পানিটির। ২০২০ সালের ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ৫১ টাকা ৮১ পয়সা। সেটি বেড়ে হয়েছে ৫৮ টাকা ২৭ পয়সায়। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫৫ টাকা ৬০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১৪৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তবে পরে তা কমে যায়। ডিভিডেন্ড ঘোষণার দিন বৃহস্পতিবার (০৭ অক্টোবর) কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ২ টাকা ৯০ পয়সা বেড়ে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়।

কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৬৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মুলধনের সাড়ে ৩ গুণ বেশি রিজার্ভ রয়েছে। তবুও কেন কোম্পানিটির রিজার্ভ বাড়াতে হবে-এমনটাই প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের।