শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছিল মাত্র দুই হাজার ১২২টি। আর ব্লক মার্কেটে একটিও শেয়ার লেনদেন হয়নি। পাশাপাশি কোনো শেয়ার উপহার কিংবা শেয়ার স্থান্তান্তর হয়নি। অথচ লেনদেনবিহীন ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭২টি শেয়ারের মালিকানা বদল হয়ে গেছে রাতারাতি।

ফলে প্রতিষ্ঠানটির আগের মাসের তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এমন তথ্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে।

সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রতি মাসের লেনদেনকৃত শেয়ারের হালনাগাদ তথ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করতে হয়, যা পরে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো তাদের ওয়েবসাইটে আপটেড করে। আর এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে একজন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অথচ জীবন বিমা খাতের নিবন্ধিত কোম্পানি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ভুল তথ্য দিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জকে!

প্রতিষ্ঠানটিতে মার্চ মাস শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মোট শেয়ার হোল্ডিং দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ ছিল ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ে ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭২টি শেয়ারের লেনদেনবিহীন মালিকানা বদল হয়েছে। অথচ পুরো মাসে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছিল মাত্র দুই হাজার ১২২টি।

কোম্পানিটির লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ মার্চে লেনদেন হয়েছিল মাত্র ১০০টি শেয়ার, ৭ মার্চ হয়েছিল এক হাজার ৪৬৪টি, ২১ মার্চ ৯৯টি, ২৫ মার্চ ৪৪০টি এবং মাসের অন্যান্য দিনগুলোয় ১৯টি। একই সঙ্গে ব্লক লেনদেন ছিল শূন্য। পাশাপাশি কোনো ধরনের শেয়ার উপহার কিংবা শেয়ার স্থানান্তরের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা ছিল না। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে এমন তথ্য। অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এখনও মার্চ মাসের শেয়ার হোল্ডিংয়ের তথ্য আপটেড করেনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য দেখানো হচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হতভম্ব হয়ে পড়ে, যা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে প্রতারণা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক বিনিয়োগকারী এ প্রতিবেদককে বলেন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে মার্চ মাসে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির আগের মাসের তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অথচ মার্চ মাসে মূল মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছিল মাত্র দুই হাজার ১২২টি। ব্লক মার্কেটে একটিও শেয়ার লেনদেন হয়নি। পাশাপাশি কোনো শেয়ার উপহার কিংবা শেয়ার স্থানান্তর হয়নি।

অথচ লেনদেনবিহীন ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭২টি শেয়ারের মালিকানা বদল হয়ে গেছে রাতারাতি। এটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে কি এভাবে স্টক এক্সচেঞ্জ ও কোম্পানি মিলে ভুল তথ্য দেয়? আবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তো মার্চ মাসের হালনাগাদ তথ্য সংযোজন করেনি। তাহলে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোথায় যাব? এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দায় কে নেবে? এটি একটিমাত্র অপরাধ নয়, কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বাধ্যতামূলক। আর পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ জোগান দেবে উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

এমনটাই বলা আছে দেশের বিমা আইনে। অথচ প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে পরিশোধিত মূলধন আছে মাত্র ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ আছে ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর আইন পরিচালনে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের। অপরদিকে বিমা আইন লঙ্ঘন করলেও রীরব ভূমিকা পালন করছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ বৃদ্ধির তথ্যটির ক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষই ভুল তথ্য দিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জকে, আমাদের সিস্টেম অপারেটর সেভাবে তথ্য উপস্থাপন করেছে।

এ বিষয়ে আমরা প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে নোটিস দিয়েছি। তারা এখন পর্যন্ত নোটিসের জবাব দেয়নি। তবে এটা জানিয়েছে, তাদের তথ্য ভুল দিয়েছে। আর ভুল তথ্যের জন্য কমিশন শাস্তি দিতে পারে। কারণ শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার আমাদের হাতে নেই।

অপরদিকে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ জহির উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির তথ্যটি ভুল। আমরা সংশোধনে কাজ করছি।

উল্লেখ্য, জীবন বিমা খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০০ সালে কার্যক্রম শুরু করেছিল প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। আর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয় ২০০৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত এক বছরের প্রতিষ্ঠানটির সর্বনিম্ন শেয়ারদর ছিল ১০৩ টাকা ২০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৫৮ টাকা ৫০ পয়সা।

আর ২০১৯ সাল শেষে নিট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৩৩ কোটি টাকা। আর সেই বছরের ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়া হয়। সেই সময়ে পাঁচ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় কম হয়েছিল, অপরদিকে বিনিয়োগ আয় এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছিল।