শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নানা উদ্যোগের পরও পুঁজিবাজারে আসেনি সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি। অভিযোগ রয়েছে তালিকাভুক্তিতে ধীরগতির পিছনে অজানা শক্তি সবসময় কাজ করেছে। তবে লাল ফিতার দৌরাত্মকে দায়ী করেছেন অনেকেই। সরকারি মোট ২৫টি কোম্পানির পুঁজিবাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১০ সালে।

দীর্ঘ ১০ বছর প্রচেষ্টায় অবশেষে দেশের পুঁজিবাজারে আসছে সরকারি মালিকানাধীন ১৫ কোম্পানি। এবার লাভজনক করে এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে সরকার। এক্ষেত্রে ভালো ও লাভজনক কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। অতীতে পুঁজিবাজারে মন্দ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যথাসম্ভব ভালো কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের চেষ্টা করছে।

এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও বড় বেশকিছু কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরো কিছু কোম্পানি। পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বাড়লে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাছাইয়ের পরিধি আরো বিস্তৃত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে এবং চাঙ্গা করতে সরকারি বৃহৎ কোম্পানি আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের পর এবার এমন উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিএসইসি) উদ্যোগে সরকারের বেশ কয়েকটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ১০ শতাংশ শেয়ার আপলোড করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। আরেকটি বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি আনার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি।

জানা গেছে, ২০১০ সালে কারসাজি তদন্তে কমিটির প্রতিবেদনে বাজারে বৃহৎ কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের আলোকে ২০১৫ সালে সরকারি ২৬টি কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওইসব কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য নিরীক্ষাপত্র চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

বর্তমান কমিশন নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ কোম্পানি তালিকাভুক্তির। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে দুই শতাংশ শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত আছে। আরও শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কমাতে। শেয়ার বিক্রি করে চলমান মূলধন ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে।

এ ছাড়া প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ও এসেনশিয়াল ড্রাগ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য কাজ শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই দুটি প্রতিষ্ঠান দেশের শীর্ষ অটোমোবাইল ও ওষুধ উৎপাদন কোম্পানি। কোম্পানি দুটি তালিকাভুক্ত হলে বাজার স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজার চাঙা করতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেল কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বিআর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড (বিআরপিএল) ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার ছাড়া হবে। তবে কোন কোম্পানির কী পরিমাণ শেয়ার ছাড়া হবে সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিতাস গ্যাস ও পাওয়ার গ্রিড আগে থেকেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এই দুটি কোম্পানির আরও শেয়ার ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘ভালো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) দেখে অনুমোদন দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি সরকারি কোম্পানি আনার। সরকারের উচ্চ মহলে বিষয়টির গুরুত্ব নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে চলার নীতিতে কাজ করছে। তবে আমরা চাপ প্রয়োগ করে দ্রুত আনার চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে আন্তরিক। দুটি কোম্পানির শেয়ারবাজারে আসার প্রাথমিক ইঙ্গিত পেয়েছি।’

এ বিষয় জানতে চাইলে ২০১০ সালে শেয়ারবাজার কারসাজি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বাজারে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে এর বড় অংশ ছোট মূলধনি। এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার সুযোগ থাকে। তাই সরকারি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করা গেলে বাজার আরও শক্তিশালী হবে।’

এ বিষয় জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, গত ১০ বছরে যেসব কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, দু-একটি বাদে এর বেশিরভাগ জাঙ্ক শেয়ার। রাষ্ট্রায়ত্ত ভালো ভালো কোম্পানি রয়েছে। এগুলো শেয়ারবাজারে আনা খুবই দরকার। ভালো শেয়ার তালিকাভুক্ত করতে না পারলে বাজার স্থিতিশীল করা যাবে না।

এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি কেন বাজারে আনা হচ্ছে না? ওষুধ, প্রসাধনী পণ্যের বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি আছে। তারা ভালো ব্যবসা করছে। তাদের সুবিধা দিয়ে হলেও বাজারে তালিকাভুক্ত করা উচিত।’সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম