শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেও বিশ্বব্যাপী থেমে নেই পুঁজিবাজারের কার্যক্রম। অটোমেটেড ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় সব দেশেই চালু রয়েছে লেনদেন। অথচ অটোমেটেড পদ্ধতিতে লেনদেন চালুর পর ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যক্তিনির্ভরতা কাটাতে না পারায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। এতে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরাও। নভেল করেনাভাইরাসের প্রভাবে পুঁজিবাজারে ধস নামলেও অধিকাংশ দেশেই লেনদেন চালু রয়েছে।

এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা কিছুটা সামলে নিয়েছে। জাপানে জরুরি অবস্থা জারির পরও পুঁজিবাজার চালু রাখা হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহ আক্রমণে পর্যুদস্ত ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রেও চালু রয়েছে পুঁজিবাজার। ফিলিপাইন দুদিনের জন্য পুঁজিবাজার বন্ধ রাখলেও পরবর্তী সময়ে আবারো চালু করেছে।

তবে এ সংকটকালীন পরিস্থিতিতেও প্রায় সব দেশেই পুঁজিবাজার চালু রয়েছে। এদিকে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। করোনাভাইরাসে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না হলে আগামি ১০ মে থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন কার্যক্রম শুরু করা হবে।

যা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সম্মতি সাপেক্ষে শুরু করা হবে।তবে ১০ মে থেকে লেনদেন চালুর কথা ভাবছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) অনলাইনে আয়োজিত ডিএসইর এক অনানুষ্ঠানিক পরিচালনা পর্ষদ সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি মানসিক যন্ত্রনায় আছে ব্রোকাররা। আমরা চাই বাজারটি খুলে যাক। কারন লাখ লাখ মানুষের আয়ের প্রধান উৎস শেয়ারবাজার। তবে করোনাভাইরাসের কারনে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি সাধারন ছুটির সঙ্গে সঙ্গে এই বাজারও বন্ধ রয়েছে। এতে বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ব্রোকারেজ হাউজগুলো এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন বন্ধ থাকায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন আয় নেই।

কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনাদি দিতে হবে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আর্থিক সংকটে ভুগছেন। এছাড়া লেনদেন বন্ধ থাকার কারনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরী হচ্ছে। তাই লেনদেন চালু করার বিষয়ে আজ ডিএসইর অনানুষ্ঠানিক পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় লেনদেন চালু করার সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় বলে জানান ডিএসইর এই পরিচালক। তিনি বলেন, এতে ডিএসইর ম্যানেজমেন্ট লেনদেন চালুর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সর্বোপরি আগামি ১০ মে থেকে লেনদেন চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসে সরকারি ছুটি বাড়লেও ওইদিন লেনদেন চালু করা হবে। তবে করোনাভাইরাসের কারনে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী হলে লেনদেন চালু করা সম্ভব হবে না। এজন্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ম্যানেজমেন্টকে আরেকটি রিপোর্ট তৈরী করার জন্য বলা হয়েছে।

এরমধ্যে বিশেষভাবে ব্যাংকিং সময়ের স্বল্পতার সঙ্গে লেনদেন চালুর সম্ভাব্যতা, স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়, সিডিবিএলের সক্ষমতা, স্টক এক্সচেঞ্জের সক্ষমতা ইত্যাদি তুলে ধরার জন্য বলা হয়েছে।এছাড়া বিএসইসির সম্মতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের লেনদেন ১০ মে থেকে চালু কথা ভাবছে ডিএসই। মানবিক কারণেও পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করা জরুরি। অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী আছেন, যাদের জীবনের সব সঞ্চয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা আছে। বর্তমানে সাধারণ ছুটিতে সবকিছু বন্ধ থাকায় তাদের অনেকেরই আয়-রোজগার নেই।

তাদের হয়তো জরুরি টাকা দরকার। কারণ অর্থনীতির আগে বেঁচে থাকা জরুরি। কিন্তু লেনদেন বন্ধ থাকায় তারা তাদের বিনিয়োগ থেকে কোনো টাকা তুলে নিতে পারছেন না। লেনদেন চালু হলে তারা তাদের এই সঙ্কট একটু সহজে মোকাবেলা করতে পারবেন।

তিনি বলেন, যেহেতু বিএসইসি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দিয়েছে, তাই বাজারে দর পতনেরও কোনো ভয় নেই। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২শ কোটি টাকা করে যে তহবিল সুবিধা দিয়েছে, তা এই সময়ে বিনিয়োগে এসে বাজারকে সাপোর্ট দিতে পারে।

আর এক সপ্তাহ আগে ডিএসইর আয়োজিত পর্ষদ সভায় লেনদেন চালু করার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করার জন্য ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা আজকে সেই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। যার আলোকে আগামিতে সরকারি ছুটি বাড়লেও ১০ মে থেকে লেনদেন চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিএসইসির সম্মতি লাগবে। এজন্য বিএসইসিতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজী সানাউল হক বলেন, ‌পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই পুঁজিবাজারের লেনদেন চালু করার পরিকল্পনা চলছে। তবে ১০ মে থেকে লেনদেন চালুর কথা ভাবছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। আশা করা যায় ১০ মে থেকে লেনদেন চালু হবে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ