শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে অবশেষে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা কাটতে শুরু করছে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীসহ পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকদের আন্তরিকতার ফলে পুঁজিবাজারে নতুন যৌবন ফিরে পেতে শুরু করছে। তেমনি পুঁজিবাজারে সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়তে শুরু করছে। সূচক এ উর্ধ্বমুখী প্রবনতা বিরাজ থাকায় স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এছাড়া পুঁজিবাজারের এ চলমান গতি অব্যাহত থাকলে শিগরিই লেনদেন হাজার কোটি টাকার দিকে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

কারন পুঁজিবাজার এমন অবস্থায় নেমে গেছে যে এখানে সব মহলে আন্তরিক হলে স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের দিকে না যাওয়ার কোন কারন নেই। এছাড়া পুঁজিবাজার ক্রান্তিকালে বিএমবিএ বাজার পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করতে ১০ হাজার কোটি টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সহ সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে আন্তরিকতার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের আন্তরিকতার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়া পুঁজিবাজার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু পুঁজিবাজার ভালো করতে আন্তরিক, সুতারাং বাজার ভাল না হয়ে যাবে না। তারই প্রতিফল দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে স্মরনকালের বড় ধরনের ধসের কারণে অধিকাংশ ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। এখন এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দীর্ঘমেয়াদী ও স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।

কিছুদিন যাবৎ পুঁজিবাজার একটু ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। মূলত বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ক্ষুদ্রদেরও আনাগোনা বাড়ছে বাজারে। এটি বাজারের জন্য ভালো দিক। সামনের দিনগুলো এভাবেই বাজার ইতিবাচক ধারায় এগোলে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বিনিয়োগকারীও আসবেন এবং তাদের বিগত দিনের লোকসান ধীরে ধীরে পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আর এ জন্য দরকার দীর্ঘ মেয়াদী একটি স্থিতিশীল বাজার। এখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সাময়িক পরিকল্পনায় বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না। বাজার স্থিতিশীল বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কতটুকু কাজ করবে সেটাই দেখার বিষয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামীণফোন কোম্পানি ৫শ কোটি টাকা সরকারকে দিচ্ছে। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী নতুন করে লাভজন ৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এমন খবরে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হয়েছে। এদিন গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৫ টাকার বেশি। সোমবার দিনের শুরুতে শেয়ারটির দাম ছিলো ২৫৭ টাকার দিনের শেষ সময়ে লেনদেন হয়েছে ২৭৩ টাকায়। এগুলো ছাড়াও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বর্তমান অবস্থায় শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কিছুটা তারল্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। এজন্য একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল করার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার একাই সব অর্থের জোগান দিতে পারে। পুরোটা না পারলে আংশিক সরকার ও বাকি অর্থের জোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি জানান, সরকার দিতে না পারলেও সমস্যা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য প্রয়োজনে পুরো অর্থই দেবে। তবে এ প্রক্রিয়ার বিষয়ে সরকারের সম্মতির প্রয়োজন আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পুঁজিবাজার ইস্যুতে গত রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, পুঁজিবাজার যে কোন মূল্যে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গতে তুলতে হবে। কারণ একটি দেশের পুঁজিবাজার খারাপ থাকলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয় না। কাজেই পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে হবে। আমি আগেও বলেছিলাম বাজারকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা উচিত। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন করে আমরা সাতটি কোম্পানিকে বাজারে আনছি।

তিনি বলেন, আমরা তারাতারি কোম্পানিগুলোকে শেয়ার বাজারে আনতে চাই। সাতটি কোম্পানিরই ব্যালেন্সশিট এখন এস্টেট করতে হবে। তাই সাতটি ফার্ম দিয়ে অ্যাসেসমেন্টের কাজটা দ্রুত শেষ করতে চাই। এস্টেট রিভ্যালু করার জন্য তাদের দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। আগমী দুই মাসের মধ্যে তারা আমাদের অ্যাসেসমেন্ট করে রিপোর্ট দেবে।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে কোম্পানিগুলো ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার বাজারে নিয়ে আসবে। বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে রয়েছে তারা বিক্ষিপ্তভাবে আছে। পুঁজিবাজারকে আরো গতিশীল করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারের জন্য ধরা হয়েছে।এই সাতটি প্রতিষ্ঠানকে খুব শীঘ্রই শেয়ার বাজারে আনা হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশের পুঁজিবাজারও ব্রডবেজড করতে হবে। আমাদের শেয়ার বাজারে যারা আছে তারা নিজস্বভাবে আছে। এই কোম্পানিগুলো কত দিনের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসতে পারে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ওভারনাইট তো তাদের আনা যাবে না, একটু সময় লাগবে। এদিকে গত রবিবারের মতো সোমবারও উত্থানে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক, টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন ৫’শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০৩৫, ১৫৩৬ এবং ৯১৯ পয়েন্ট। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৫০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

যা আগের দিন থেকে ৪১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৬টির বা ৫৫ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১১৭টির বা ৩৩ শতাংশের এবং ৪২টি বা ১২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৮৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা খুলনা পাওয়ারের ২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার এবং ২০ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে সামিট পাওয়ার।

ডিএসইর টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে : বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, গ্রামীণফোন, রিংশাইন, এডিএন টেলিকম, স্কয়ার ফার্মা, এসএস স্টিল এবং বিবিএস কেবলস। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭১৫ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৯টির, কমেছে ৭৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দর। সিএসইতে ২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ