শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: মন্দাবাজারে শেয়ার বিক্রি করছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এছাড়াও আলোচ্য সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, আস্থা সংকটে বিদেশিদের বিনিয়োগ কমতে পারে।তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এমন আশঙ্কায় তারা শেয়ার বিক্রি করে নগদ অর্থ তুলে নিচ্ছেন। এরফলে সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগ কমলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম স্বাভাবিক মূল্যস্তরের নিচে রয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ারের দাম যেখানে থাকার কথা, বর্তমানে তার চেয়ে কম দামে শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মতে, বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে বিপর্যয় চলছে। এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

এ বিষয় জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আস্থা সংকটে বিনিয়োগ কমতে পারে। একটি দেশে বিদেশিরা যখন বিনিয়োগ করতে যায়, তখন কয়েকটি বিষয় দেখে। এর মধ্যে সুশাসন অন্যতম। কেউ অন্যায়ভাবে তার পুঁজি হাতিয়ে নিলে বিচার হবে এ নিশ্চয়তা চায়। পাশাপাশি বাজার ওঠানামার ধরনও বিদেশিরা বিবেচনায় নেয়।

Page-01 (4)আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব ভালো অবস্থানে নেই। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে মূল্যস্তর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেই। ফলে এসময় কোনো বিনিয়োগকারী মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা খুবই সচেতন।নির্বাচনী অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় সাম্প্রতিক সময়ে বাজার নিয়ে তাদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে বিদেশিরা নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ২১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। বিপরীতে ২৪৭ কোটি সাড়ে ৫০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন। কিন্তু অক্টোবর মাসে এসে সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। এ মাসে উল্টো ২৮২ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৩ টাকা শেয়ার কেনার বিপরীতে ৪৮৪ কোটি ১৮ লাখ ৯১ হাজার ৭৭৫ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন তারা। যা সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ২৭২ কোটি টাকা বা আড়াই গুণ বেশি।

আর শেয়ার বিক্রির কারণে এ মাসে লেনদেন ৩০৭ কোটি ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫৮ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬৭ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২২৯ টাকায়। এর আগের মাসে লেনদেন হয়েছিলো ৪৫৯ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭১ টাকা।

তার আগে আগস্ট মাসে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছিলো ৩৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার ২০৭ টাকা। সেই মাসে বিদেশিরা ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৪২৩ টাকার শেয়ার বিক্রির বিপরীতে শেয়ার কিনেছিলেন ১৭৬ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার ১৮৪ টাকার।

তারও আগের মাস জুলাইয়ে বিদেশিরা শেয়ার কিনেছেন ৪১২ কোটি ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৫১ টাকার। তার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৪৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৮১৩ টাকার। তারও আগের মাস জুনে ৪৪৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৮ টাকার শেয়ার বিক্রির বিপরীতে ৬৫৩ কোটি ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৬০ টাকার শেয়ার কিনেছিলেন তারা।

একই ভাবে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে শেয়ার বিক্রি করে আসছেন বিদেশিরা। ফলে ক্রমাগতভাবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। আর লেনদেন কমায় মুনাফাবঞ্চিত হয়েছে ব্রোকারেজ হাউজ। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দরপতনে পুঁজি হারানোর ভয়ে বিদেশিদের কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। আবার কেউ কেউ বাজার পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ডিএসইতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোটিয়ামের অর্থ ও আইসিবি ২ হাজার কোটি টাকার ফান্ড পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে বিদেশিদের মধ্যে আস্থা একটু বাড়ছে। ফলে আগামীতে বাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়াবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা।