শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, বরিশাল ও খুলনা ব্যুরো : দেশের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ মানুষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষ। কাল শনিবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে খুলে যাবে দক্ষিণের অর্থনীতির দুয়ার। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা ফিরবে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের। সঙ্গে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বন্ধন হবে আরও সুদৃঢ়।

এছাড়া পদ্মা সেতুর পরোক্ষ ইতিবাচক প্রভাবও পড়বে নানা ক্ষেত্রে। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি, শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের ওপর।

এদিকে, পদ্মা সেতু’র মাধ্যমে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনই নয়, বৈচিত্র আসবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে। একদিকে যেমন দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগসূত্র তৈরি হবে, ঠিক তেমনি এই সেতু ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তবে পদ্মা সেতুর কারণে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে মৎস্য ও কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণে পরিবহনের ক্ষেত্রে। সেতুর কারণে কৃষক তার পণ্যের সঠিক মূল্য পাবেন। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারের সঙ্গে এ দেশের সড়ক ও রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে এ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে বলা হয় খাদ্যভান্ডার। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ টন কৃষিপণ্য রাজধানীতে নেয়া হয়। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে সেখানে সবুজ বিপ্লব ত্বরান্বিত হবে। বিশেষ করে খুলনাঞ্চলের উৎপাদিত তরমুজ ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের অসুবিধাসহ বিপণন সমস্যার কারণে কৃষকরা তেমন লাভবান হন না।

দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ চরে নারিকেল ও সুপারির চাষ হয়। সমতলে হয় পান ও তেজপাতার চাষ। পটুয়াখালীতে মুগ ডালের চাষ হয় বাণিজ্যিকভাবে। জাপানসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তা রফতানি করা হয়। প্রচুর ফুলের চাষ হয় যশোরে। এখানকার ফুল রফতানি হয় বিদেশেও।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে এখন খুলনাঞ্চল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত কৃষিপণ্য প্রেরণ করা সম্ভব হবে। তাতে কৃষকদের পণ্য বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে এসব কৃষিপণ্যের চাষ এবং বাজারজাত উৎসাহিত হবে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চল মৎস্য চাষ ও আহরণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ আসে মূলত দক্ষিণাঞ্চল থেকে। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে আছে অসংখ্য মাছের ঘের। সেখানে গড়ে উঠেছে অনেক প্রক্রিয়াকরণ শিল্প। তাতে কাজ করছে অসংখ্য দরিদ্র-শ্রমজীবী মানুষ। পদ্মা সেতুর ফলে নিবিড় মৎস্য চাষ উৎসাহিত হবে। রেণু পোনাসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য বলছে, প্রতিদিন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৪৫ থেকে ১৬০ টন মাছ নেয়া হয়। এসব মাছের বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। অপর সূত্রে মতে, দক্ষিণাঞ্চলেই প্রচুর মাছ উৎপাদিত হয়। বরিশালের ইলিশ, সুন্দরবনের নানা প্রজাতির মাছ ও বঙ্গোপসাগরেও আহরণ করা মাছ খুলনায় আসে।

এখান থেকে মাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ বরফ দিয়ে ট্রাকে করে ঢাকা নেয়া হয়। এক দিনের মধ্যে মাছগুলো ঢাকা পৌঁছাতে না পারলে ভালো বাজারদর পাওয়া যায় না। অনেক সময়ে ফেরিতে গাড়ি ওঠাতে ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ওই দিন ঢাকার বাজারে মাছ বিক্রি করতে পারে না। পরের দিন বিক্রি করতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এখন আর এ সমস্যা থাকবে না।

মাছ জরুরি খাদ্যপণ্য। নির্দিষ্ট সময় পর এটি নষ্ট হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে মাছের বিপণন ও বাজারজাতকরণ সহজ হবে। এতে জেলে, মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হবেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিদেশে মৎস্য প্রেরণ সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হবে। তাতে মাছের অপচয় হ্রাস পাবে। তাছাড়াও সুনীল অর্থনীতি হবে গতিশীল। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি পাবে মৎস্য খাত থেকে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, মাছ পরিবহনে সময় একটি বড় বিষয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে ফেরিঘাটে বেশি সময় ব্যয় হলে বরফ গলে গিয়ে যে সংকট দেখা দেয়, সেটি দূর হলেই চাষি ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই দূর হবে। রাজধানীতে চিংড়ি পাঠাতে পদ্মায় ফেরির যানজটের কারণে অনেক সময় দুই দিনও দেরি হয়। তখন চিংড়িতে দেয়া বরফ ফুরিয়ে যায়।

এতে চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া জন্মে। কিন্তু সেতু চালু হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। সকালে পাঠানো চিংড়ি বিকেলে রাজধানীতে বিক্রি করতে পারবে। তিনি জানান, প্রতি বছর দেশ থেকে ৩০ হাজার টন চিংড়ি রপ্তানি হয়। এসব চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা খুলনা ও চট্টগ্রামে। অনেক সময়ে খুলনা থেকে চট্টগ্রামে চিংড়ি আনা-নেয়া করতে হয়। তখন ফেরিঘাটে অনেক কালক্ষেপণ হয়ে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।

প্রাণিসম্পদ : প্রাণিসম্পদ খাতে পদ্মা সেতুর প্রভাব হবে ইতিবাচক। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুগ্ধ ও মাংস শিল্প বিকশিত হবে। গরু মোটাতাজাকরণ কর্মসূচী দ্রুত এগিয়ে যাবে। অনেক দুগ্ধ খামার গড়ে উঠবে। মাদারীপুরের টেকেরহাট এখন দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এর পরিধি শরীয়তপুর, ফরিদপুর এবং গোপালগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তাছাড়াও পোল্ট্রি শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।

দানাদার খাদ্য সহজে পরিবহন করার কারণে এর মূল্য হ্রাস পাবে। খামারিরা প্রাণি-পাখি প্রতিপালনে আগ্রহী হবে। দুধ ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশ ঘটবে। তাতে বৃদ্ধি পাবে খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান। পরিবহন খরচ কমাতে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরের অধিকাংশ পশু ব্যবসায়ী ট্রলারে পশু নিয়ে রাজধানীতে আসেন।

অন্যদিকে যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীরাও ট্রাকে করে গবাদিপশু ঢাকায় আনেন। পদ্মা পার হতে এসব ট্রাকের জন্য এতদিন ফেরিই ছিল ভরসা। বিড়ম্বনার সঙ্গে যুক্ত হতো বাড়তি খরচ। আবার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকতেন, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় পশু আবার অসুস্থ হয়ে না যায়। অনেক সময় ফেরিঘাটে অসুস্থ গরু জবাই করে কম দামে মাংস বিক্রির নজিরও রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ আশা করছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা কমবে। আগে একটি ট্রাকে ২০টি গরু আনতে খরচ হতো ১৪-১৮ হাজার টাকা। এখন হয় ২২-২৫ হাজার টাকা। পদ্মা সেতু’র ফলে কম দামে ট্রাক পাওয়া যাবে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে।

পাট : খুলনা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পাট রপ্তানি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাট কিনে খুলনায় নিয়ে আসা হয়। এই পাট মোংলা বন্দর হয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পাট কিনে আনার সময় পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হয়। আবার খুলনার পাটকলে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য রাজধানীতে নেয়া হয়। এতে যে সময়ের অপচয় হয়, তার আর্থিক মূল্য অনেক বেশি বিশ্ববাজারে পাটের অবস্থান ভালো করতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর এ খাত আরও এগিয়ে যাবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যেমন দুর্ভোগ লাঘব করবে, তেমনি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। খুলনা-সাতক্ষীরা-যশোর বা পটুয়াখালী-বরিশাল-বরগুনা এখন মাত্র চার ঘণ্টায় যাতায়াতে সম্ভব হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির সুফল পাবেন কৃষক সমাজ। তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য অল্প সময়ে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছে যাবে। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের গতি আবারও ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ খুলনা অঞ্চলে অন্যান্য যে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে তার জন্য নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। এখন আমরা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনে আমাদের যে দক্ষ জনশক্তি দরকার তা গড়ার ভূমিকা তা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেই নিতে হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লিংক স্থাপন করতে হবে।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে এবং দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দিন দিন বেড়ে যাবে।

পদ্মা সেতুর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন যেমন অনেক এক্সপার্ট ঢাকা থেকে আসতে চান না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর তাদের আসার আগ্রহটা বেড়ে যাবে এবং ঐ সমস্ত এক্সপার্টদের জ্ঞান দ্বারা শিক্ষার্থীরা আরো লাভবান হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু’র মধ্যদিয়ে ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন মোকাবেলা সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: শহীদুর রহমান খান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা পদ্মা নদীর জন্য দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার পথযাত্রা শেষ হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সূচিত হবে একটি নতুন অধ্যায়।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর কারণে খুলনাঞ্চলের ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এর মধ্যে অন্যতম কৃষিতে পরিবর্তন। এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রচুর ফসল উৎপাদন করতে পারলেও পর্যাপ্ত দাম পান না। এর মূল কারণ হলো, রাজধানীর সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়া। তাই পদ্মা সেতু’র কারণে যাতায়াতের আর সমস্যা থাকবে না। এতে কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থা সহজ হবে, এর সঙ্গে জড়িতরাও লাভবান হবেন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন কোটি মানুষের দীর্ঘ প্রত্যাশিত স্বপ্ন সেই পদ্মা সেতু আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কতটা প্রয়োজন ছিল-তা বলে শেষ করা যাবে না। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি, শিল্প ও বাণিজ্যে ব্যাপক গতিশীলতার সৃষ্টি হবে। এ অঞ্চলের মানুষসহ দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। বন্দর মোংলা ও পায়রা আরও গতিশীল হবে। বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মজ্ঞু বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে মানুষের স্মৃতিতে থাকবে মাওয়া-কাঠালবাড়ী ফেরী, লঞ্চ ও স্পীড বোটে পারাপারের ৩০ বছরের স্মৃতি। গল্প হয়ে থাকবে আমাদের দু:খ সুখ বেদনা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার নানান কাহিনী।

ঘুরে ফিরে আসবে আমাদের সামনে এবং আমরা বলবো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ওইতো ওখান দিয়েই আমরা পার হতাম প্রমত্তা পদ্মা নদী। স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মা নদী পারাপারের মাওয়া-কাঠালবাড়ী ঘাট।

তিনি বলেন, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, কখনও ঘণ কুয়াশা, কখনও প্রচণ্ড খরতাপে, কখনও ঝড় বৃষ্টিস্নাত রাতে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হলেও একটা এ্যডভেঞ্চার ছিলো, যাত্রায় গরম গরম ডিম, পরাটা, সিদ্ধ ডিম ঝালমুড়ি, চা গরম, ফেরীঘাটে অথবা লঞ্চে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া, সব হারিয়ে যাবে। পদ্মা ব্রীজ, এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার প্রাপ্তিতে আমরা সৌভাগ্যবান, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।