শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা, বিদেশি যেসব কোম্পানি দেশে ভালো ব্যবসা করছে তাদের মূলধনের একটি অংশ বাজারে ছাড়া, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো, তাদের মূলধনের জোগান বাড়াতে তহবিলের উৎস বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ধারণের সমক্ষতা আরও বাড়াতে চায় সরকার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিরোধিতা করেছে।

এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রাতিষ্ঠানিক নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিএসইসি) পুনর্গঠন করেছে। একই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা করা হয়েছে। পুনর্গঠিত বিএসইসি বাজারে মৌলিক পরিবর্তন আনতে কাজ করেছে।

এদিকে চীনা কনসোর্টিয়ামের অংশগ্রহণ প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের পুঁজিবাজার নতুন করে উপস্থিত হচ্ছে। এমনিতেই পুঁজিবাজারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন এক লাখ ৬৪ হাজারের বেশি প্রবাসী, এক বছর আগে যার সংখ্যা ছিল এক লাখ ৫১ লাখ।

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর হাতের নাগালে রয়েছে, যে কারণে প্রবাসীদের এই মার্কেটের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে চীন কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় প্রবাসীদের বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে চীনা কসসোর্টিয়াম দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রবাসীদের এই বাজারের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। আর তারা বাজারে ঢুকতে চান যখন বেশিরভাগ শেয়ারের দর ক্রয়ের অনুকূলে থাকে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে এমন পরিবেশ বিরাজ করছে, যে কারণে বাজারের প্রতি সবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে যেসব আইনি দুর্বলতা ছিল, তা সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। যেসব আইন ছিল না তা নতুন করে প্রণয়ন করা হয়েছে। আইন প্রণয়নের পাশাপাশি বাজারের সার্ভিলেন্স এবং মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পুঁজিবাজার যেহেতু অর্থবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই কোনো এক পক্ষের সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রভাব পড়ে বাজারে। এ কারণে বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে কমিশন।

এ ছাড়া বাজারে যাতে কোনো ধরনের জাল-জালিয়াতির ঘটনা না ঘটতে পারে সে জন্য সার্ভিলেন্স ও মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে নিজস্ব সফটঅ্যয়ার চালু করেছে বিএসইসি। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে কোনো ধরনের কারসাজির ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সংকেত দেবে এই সার্ভিলেন্স সফটঅয়্যার। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির হিসাবে স্বচ্ছতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট পাস হয়েছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে এই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রবৃদ্ধির গতিধারা অব্যাহত রাখতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের প্রধান উৎস হলো শেয়ারবাজার। দেশের শেয়ারবাজারকে সমৃদ্ধ করতে ভবিষ্যতে ডেরিভেটিভস এর মত নতুন নতুন পণ্য বাজারে চালু করা হবে এবং দেশের শেয়ারবাজারকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড্ করা হবে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে পুঁজিবাজারকে সামনে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নানামুখী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৯ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, ধ্বংসস্তুপের ওপর থেকে পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ দরকার। আর বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা সার্ভিলেন্স জোরদার করেছি। আইন যুগোপযোগী করেছি। যেসব ক্ষেত্রে আইন ছিল না, সে বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উপযুক্ত জায়গা তৈরিতে কাজ করছি। এখন বাজার বড় হচ্ছে। বাড়ছে তারল্যের প্রবাহও। আমরা নিয়মের মধ্যে রেখে একে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, আইন-কানুন সংস্কারে ব্রোকার, ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সুবিধা হয়েছে। এতে বাজারে জবাবহিদিতা বাড়বে। এ ছাড়া ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ফল শিগগিরই বিনিয়োগকারীরা পাবে।

ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেন, গত ৭ বছরে পুঁজিবাজারে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, যার ফল ইতোমধ্যে বাজার পেতে শুরু করেছে। নানা ধরনের সংস্কারের ফলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। ফলে বাজার আবারও গতিশীল হচ্ছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ চালু করা হয়েছে। গুজব বন্ধে কমিশন বিনিয়োগ উপদেষ্টা বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া কমিশন করপোরেট গাইড লাইন্স যুগোপযোগী করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় পুঁজিবাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও এটা কল্যাণ বয়ে আনবে। তাদের যুক্তি চীনা কনসোর্টিয়াম দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তারা মালিকানা পেয়েছে। এখন অবশ্যই তারা এ মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করবে। মার্কেটে যুক্ত হবে নতুন নতুন পণ্য, আসবে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা।

এদিকে চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইতে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ বাড়বে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে তাদের বিনিয়োগ, যা পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এমনটি ভাবছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। চীনের টেকনোলজি যুক্ত হলে সার্ভিলন্স আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তারা।

তাদের অভিমত, এর ফলে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতার জায়গাটি আরও পরিষ্কার হবে। চীনের পুঁজিবাজারে অসংখ্য বড় বড় বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাদের কিছু অংশ যদি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে, তবে এ বাজার আরও শক্তিশালী হবে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ