শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কাই করছে না রংপুর ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাকস (আরডি ফুড) লিমিটেডের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও নির্দেশনা অনুযায়ী এই কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে নিজ কোম্পানির শেয়ার ধারণ করতে পারেননি।

বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনদিন তাদের ধারণ করা শেয়ার কোনো ঘোষণা ছাড়াই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অবশ্য এই বিষয়ে আজ পর্যন্ত কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে নিজ কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে এমন নির্দেশনা রয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানছেন না আরডি ফুডের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা। উল্টো তাদের হাতে থাকা শেয়ার চড়া দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ধারাবাহিকভাবে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা এ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ৩.০৯ শতাংশ বা ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৫৩০টি শেয়ার বিক্রি করেছেন। যার বাজারদর সাড়ে তিন কোটি টাকারও বেশি। উল্লেখ্য পরিমাণ শেয়ারের পুরোটাই বিক্রি করা হয়েছে ঘোষণা ছাড়া। অথচ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে বিএসইসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ৩০ দিনের আগাম ঘোষণা দেওয়ার বিধান রয়েছে।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সব সময় সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ কোম্পানির ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে দুই শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছিল, পরিচালকেরা নিজ নিজ কোম্পানির নূন্যতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হলে তাদের পদ শূন্য হয়ে যাবে। তবে স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালকদের এ নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়। আর সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে ওই সব কোম্পানি পুনরায় বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না।

এদিকে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৪ মে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতার প্রজ্ঞাপনটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় উচ্চ আদালত। তবে বিএসইসি’র আবেদনের প্রেক্ষিতে এর পরের দিন অর্থাৎ ১৫ মে উচ্চ আদালতের রায়টি স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। ফলে যারা বিএসইসি’র নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা আইন লঙ্ঘন করছেন বলে বিবেচিত হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সম্মিলিতভাবে নিজ কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করে উল্টো বিক্রি করছেন আরডি ফুড কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ৩.০৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছেন তারা। অবাক করার বিষয় হলো- এই শেয়ারগুলো বিক্রি করেছেন কোনো ঘোষণা ছাড়াই।

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রকাশিত কোম্পানির শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আরডি ফুড কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক সম্মিলিতভাবে নিজ কোম্পানির ২৭.৮৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছিলেন। ২০১৭ সালের ৩০ জুন যা ২৬.৫৭ শতাংশে নেমে আসে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১.২৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন এই কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা।

এদিকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ২৬.৫৭ শতাংশ থাকলেও ৩১ জুলাই তা আরও কমে ২৩.৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এই এক মাসে ৩.০৯ শতাংশ বা ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৫৩০টি শেয়ার বিক্রি করেছেন তারা। জুলাই মাসে এ কোম্পানির শেয়ারদর ১৯ টাকা থেকে ২০.৩০ টাকায় ওঠানামা করে।

ওই মাসের সর্বনিন্ম দরে বিক্রি করা হলেও শেয়ারগুলোর বাজারদর ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি। যা ধারণ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ডিএসই’র ওয়েবসাইটে এ শেয়ার বিক্রির কোনো ঘোষণা দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে আরডি ফুডের ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে একাধিক ফোন দিলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী কমিশনের জারিকরা নির্দেশনাটি সংশোধন করা প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে সংশোধন করার জন্য অর্থমন্ত্রনালয়ে সম্প্রতি প্রস্তাব পাঠানোর পাশাপাশি অ্যাটর্নী জেনারেলের কাছেও আইনী সহায়তা চেয়েছে বিএসইসি। পরিচালকদের শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নিয়ে অর্থমন্ত্রনালয়ে পাঠানো ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে নূন্যতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।

আর যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটির ওপরে কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার নিচে সেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিচালকরা এককভাবে নূূন্যতম ১.৫ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। ৫০০ কোটির ওপরে কিন্তু ১ হাজার কোটি টাকার নিচে এমন পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিতে পরিচালকরা ন্যূনতম ১ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ১৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে।

এছাড়া ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির পরিচালকরা এককভাবে নূন্যতম ০.৫০ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ১০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চ‚ড়ান্তভাবে কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে এর সুযোগ নিচ্ছেন কিছু কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক।

তথ্য মতে, আরডি ফুডের পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে কমিশনের জারিকরা নির্দেশনাটি সংশোধন হলেও এই কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের এ কোম্পানি মোট চারবার ডিভিডেন্ড দিয়েছে, ঘোষিত এই ডিভিডেন্ডের পুরোটাই স্টক। কোম্পানির মোট ৫ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৬০.৯২ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৫.৬০ শতাংশ। বাকী শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ