শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার ধামরাইয়ে কারখানা স্থানান্তর করতে যাচ্ছে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস লিমিটেড। কোম্পানির পরিকল্পনা অনুসারে, সাভারের ধামরাই কিংবা হেমায়েতপুরে নতুন কারখানার জন্য জমি কেনার কথা ছিল। জানা গেছে, নতুন কারখানার জন্য শেষ পর্যন্ত ধামরাইয়ে জমি নির্বাচন করা হয়েছে। তবে চুক্তিপত্রসহ বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতার কারণে জমি ক্রয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে অন্তত দুই মাস সময় লাগবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের একজন পরিচালক বলেন, গতকাল পর্ষদ সভায় নতুন কারখানার জন্য জমি ক্রয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কারখানার জন্য ধামরাইয়ে ২০০ ডেসিমল জমি নির্বাচন করেছে। তবে ওয়ারিশ সূত্রে জমিটির মালিকানা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে বিভক্ত থাকায় সবার সঙ্গে সমন্বয়ে কিছুটা সময় লাগবে। এছাড়া জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়েও কিছুটা দরকষাকষির বিষয় রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে জমি ক্রয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে আরো অন্তত দুই মাস সময় লাগবে। আশা করছি, এর মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত খবরাখবর আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিয়োগকারীদের জানানো সম্ভব হবে।

বিডি ওয়েল্ডিংয়ের কোম্পানি সচিব সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, কারখানা স্থানান্তরের জন্য জমি কেনার কাজ চলমান রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে তখন বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় কারখানা স্থানান্তরে সহায়তার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সঙ্গে এরই মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বিডি ওয়েল্ডিং। চুক্তি অনুসারে জমি নির্বাচন, ক্রয়, কারখানা স্থানান্তরসহ সার্বিক বিষয়ে কোম্পানিটিকে সহযোগিতা করবে আইসিবি।

গত জুনে স্টক এক্সচেঞ্জ মারফত কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছিল, বিএসআরএম গ্রুপের কাছে চট্টগ্রামের কারখানার জমিটি বিক্রি করে ৪২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এ টাকা থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করা হবে। অবশিষ্ট অর্থ নতুন কারখানা স্থাপন, জমি ক্রয় ও উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হবে।

বিডি ওয়েল্ডিংয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের মন্তব্য অনুসারে, সাউথইস্ট ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দেনা অন্তত ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২২ কোটি টাকা সাউথইস্ট ব্যাংক ও ১৩ কোটি টাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে। তবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করার ব্যাপারে কোম্পানি সূত্রে কিছু জানা যায়নি।

এদিকে আইসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিডি ওয়েল্ডিংয়ের পর্ষদে তাদের প্রতিনিধি রয়েছেন। কোম্পানিটির শেয়ারও আছে তাদের হাতে। তবে কোম্পানির যথেষ্ট সম্পদ না থাকায় আইসিবির তহবিল থেকে বিডি ওয়েল্ডিংকে বড় অংকের ঋণ দিয়ে ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়াটা তাদের পক্ষে সহজ হবে না। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় অংশীদার হিসেবে বিডি ওয়েল্ডিংকে সর্বোচ্চ সহায়তা করতে চায় আইসিবি।

প্রসঙ্গত, লোকসান ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার একটি দুষ্টচক্রে আটকে রয়েছে ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোড রড ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস উত্পাদক বিডি ওয়েল্ডিং। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোয় (সিআইবি) ঋণখেলাপি হিসেবে কোম্পানিটির নাম উঠে আসে। এ কারণে অন্য কোনো ব্যাংকের কাছ থেকেও ঋণ পাচ্ছে না তারা।

একসময় কাঁচামাল আমদানি করলেও ব্যাংকের সমর্থন না পাওয়ায় এক পর্যায়ে স্থানীয় আমদানিকারকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে কাঁচামাল কিনে উত্পাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল বিডি ওয়েল্ডিং। বছরের পর বছর প্রতিযোগীদের কাছে বাজার হারিয়ে ২০১৫ সালে এসে লোকসানে পড়ে তারা।

লোকসানের কারণে ২০১৬ হিসাব বছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি বিডি ওয়েল্ডিং। জুন ক্লোজিংয়ের বাধ্যবাধকতায় সেবার ১৮ মাসে হিসাব বছর গণনা করে কোম্পানিটি। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৩ টাকা ৫০ পয়সা। ২০১৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১২ টাকা ৮৭ পয়সা।

তবে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের মার্চ (প্রথম তিন প্রান্তিক) সময়ে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের লোকসান আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৭২ পয়সা,  যেখানে আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ২ টাকা ৫৮ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১২ টাকা ১৬ পয়সা।