marginশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০১০ সালের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মার্জিন ঋণধারী বিনিয়োগকারীরা। ধসের মুখে পড়ে লাভের বদলে পকেটের টাকায় ঋণের দায় শোধ করে অনেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। আর যারা এটা করতে পারেননি তারা এখনও ঋণের বোঝা টেনে যাচ্ছেন। চাইলেও তারা মার্জিন ঋণধারী বিওতে নতুন বিনিয়োগ করতে পারছেন না।

কারণ এ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়া মাত্র পাওয়াদার টাকা কেটে নিচ্ছেন। আর সে কারণে পুঁজিবাজারে টিকে থাকতে কৌশলী হয়েছেন এসব বিনিয়োগকারীরা। তারা নতুন বিও খুলে আবার লেনদেন করছেন। তবে নতুন করে ঋণ নেয়ার কথা ভাবছেন না কেউই। অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউসেগুলোতে মার্জিন ঋণ বাবদ টাকা আটকে রয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি।

প্রাপ্ত তথ্য মতে দুমাস আগে নতুন বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণে কিছুটা আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। বাজারের বৈরী আচারণে কেউ আর মার্জিন ঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে হাউসগুলোও ঋণ দেয়ার ব্যাপারে হিসাবে হয়েছেন। গ্রাহক যাতে বিপদে না পড়ে সেই জন্য অনেক হাউস ঋণ দেয়া বন্ধ রেখেছে।

এ প্রষঙ্গে জয়তুন ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঋণ নেয়ার বেলায় এখন বিনিয়োগকারীরা খুবই হিসাবি। কারণ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ২০১০ সালের ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সে কারণে তারা আর নতুন করে ঋণ নিতে যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এখন বাজারের যে সার্বিক পরিস্থিতি তাতে মার্জিনধারীরা কতটুকু লাভবান হতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে আমরা তাদের উৎসাহিত করছি না।

ঋণ না নেয়ার কারণ: বর্তমানে মার্জিন ঋণের অনুপাত ০.২৫। অর্থাৎ ১ লাখ টাকায় একজন বিনিয়োগকারী ২৫ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। আর এ ঋণের বিপরীতে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে ঋণের অনুপাত বিভিন্ন রকমের। যেখানে সুদ হিসাবে নেয়া হচ্ছে ১১ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত ১৮ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ৩ শতাংশ সার্ভিস চার্জ।

অর্থাৎ যিনি ১১ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছেন তার সুদ (সার্ভিস চার্চ) গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৪ শতাংশ। আর যিনি ১৫ শতাংশ হারে ঋণ নিচ্ছেন তার সুদ হচ্ছে ১৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে এত উচ্চ মূল্যে ঋণ নিয়ে তা দিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হওয়া কষ্টকর। যে কারণে মার্জিন ঋণ থেকে দূরে সরে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার কিছুটা গতিশীল হওয়ায় পুঁজিবাজারে ফিরে এসেছেন তারা আগের বিওতে লেনদেন করছেন না। কারণ এই বিওতে লেনদেন করতে হলে নিয়মানুযায়ী ইক্যুইটি মাইনাস থাকতে পারবে না। তাই টাকা জমা হওয়া মাত্রই তা মাইনাস ইক্যুইটিতে যোন হচ্ছে। সে কারণে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন কোড বা নতুন বিও ব্যবহার করেছেন। কারণ এখানে টাকা কেটে নেয়ার ভয় নেই।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ঋণ নিয়ে খুব একটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে বাজারের পরিস্থিতিও তেমন নয় যে, বাজার থেকে মুনাফা করে কিস্তি দেয়া সম্ভব। তাই অনেকেই এ ঋণ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হননি। ঋণের শর্ত আরও সহজ করার দাবি জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সদস্য মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হাউসগুলোতে মার্জিন ঋণের হার অনেক। অন্যদিকে বাজারের অবস্থাকে ভাল বলা যায় না। ফলে এই অবস্থায় কেউ ঋণ নিতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ এই মার্কেট থেকে ব্যবসা করে ঋণ শোধ করা কঠিন। তিনি মার্জিন ঋণের সুদের হার আরও কমানোর অনুরোধ করেন।