BANK LAGOশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন পর ব্যাংক খাতের শেয়ারে সুবাতাস বইতে শুরু করছেন। দীর্ঘদিন পর ব্যাংক খাতের শেয়ারে দর বাড়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারের আধিপত্য বিস্তার ছিল। ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের প্রতি আস্থা ফিরতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের।

দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের শেয়ারের প্রতি যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা নতুন করে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর বাড়ছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার দর। সাধারনত দুই  কারনে ব্যাংক খাতের শেয়ারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা এমনই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের প্রতিবেদকের কাছে।

তারা বলেন, পুঁজিবাজারের গতি ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি কদর বাড়ছে। সামনে আরো বাড়বে। কারণ অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কাছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের প্রতি রয়েছে ব্যাপক আস্থা। যদিও পুঁজিবাজারের মন্দা সময়ে এ খাতের প্রতি আস্থা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবার এ খাতের শেয়ারের প্রতি ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষকরা জানান, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ পুঁজিবাজার উন্নয়নের স্বাভাবিক গতি বাড়াতে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এ খাতের শেয়ার এখনো কিছুটা বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত। পাশাপাশি রয়েছে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ আস্থাভাজন।

তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। তারা আরো জানান, ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন এবং শেয়ার সংখ্যা বেশি। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এ খাতকে বিনিয়োগ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আবার কোম্পানিগুলোর লেনদেন ও দর ওঠানামা অনেকটাই স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

অন্যান্য কোম্পানির মতো ঢালাওভাবে এ খাতের শেয়ার দর উত্থান-পতন হয় না। কয়েক বছর ব্যবসায়িক মন্দার কারণে বেশি মুনাফা দিতে পারেনি এ খাতের কোম্পানিগুলো। তারপরও অন্যান্য খাতের চেয়ে ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

পুঁজিবাজারের পতনের সময় বিনিয়োগকারীরা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে এ খাতে বাজার সেলপ্রেসার বেশি হয়েছিল। পাশাপাশি প্রফিট টেক করেছে, যার প্রভাব পড়েছে পুরো খাতের ওপর। কিন্তু

বর্তমানে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক গতিতে চলছে। বাজার একটানা যেমন বাড়ছে না, তেমনি বাজার একটানা দরপতন ঘটছে না। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যাংক খাতের শেয়ার ধারণ বা বিনিয়োগ করতে হবে।

তাই এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে পুরনো লেনদেনের চমকে ফিরে আসবে বলে জানান তারা। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক পরিচালক জানান, ব্যাংক খাতের শেয়ার সংখ্যা বেশি। পুঁজিবাজারে সব ব্যাংকের শেয়ার দর সামান্য বাড়লে পুরো বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই)  ব্যাংক খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার লেনদেনের অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংক খাতে প্রায় শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।

প্রায় মাসখানিক পরে ব্যাংক খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে। যার জন্য আজকের বাজার ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ হয়েছে বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত বাজারের লেনদেন অনেকটাই নির্ভর করে থাকে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের উপর। এছাড়া গত বছরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বেশি হওয়ার কারণে মুনাফা বেড়েছে।

সঞ্চয়পত্রসহ সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদ হার কমেছে। এর ফলে ভালো লাভের প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারে ঝুঁকছেন। তাছাড়া এখাতে শেয়ার দর অন্যান্য খাতের তুলনায় অনেকটাই কম হওয়ার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনটোই বেড়েছে।

এদিকে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়িয়ে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। যা দেশীয়দের আস্থা ফেরাতে সহায়তা করছে পাশাপাশি ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ করাকে নিরাপদ হিসেবে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও। তাছাড়া সম্প্রতি এ খাতের প্রায় সব কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে। যার জন্য বিনিয়োগকারীরা এ খাতের প্রতি বিনিয়োগ করতে আগ্রহ অনেকটাই বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

জানা যায়, ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২২ কোম্পানির, দর কমেছে ৫ কোম্পানির এবং দর অপরিবর্তীত রয়েছে ৩ কোম্পানির। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে এবি ব্যাংকের। এমনকি ব্যাংকটি আজ টার্নওভারের শীর্ষে ও গেইনারের শীর্ষে তালিকায় উঠে আসে। বৃহস্পতিবার এবি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১.৭০ টাকা।

এছাড়াও আল-আরফাহ ব্যাংকের ০.১০ টাকা, ব্যাংক এশিয়ার ০.৩০ টাকা, সিটি ব্যাংকের ০.২০ টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ০.১০ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ০.২০ টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটজ ইসলামী ব্যাংকের ০.২০ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের ১ টাকা, যমুনা ব্যাংকের ০.২০ টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ০.১০ টাকা,

এনসিসি ব্যাংকের ০.৩০ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ০.৩০ টাকা, প্রাইম ব্যাংকের ০.৪০ টাকা, রুপালী ব্যাংকের ০.৯০ টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ০.১০ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ০.৫০ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ০.৪০ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ০.৪০ টাকা এবং ইউনাইটেড কর্মাসিয়াল ব্যাংকের ০.২০ টাকা দর কমেছে।

এদিকে দর কমার তালিকায় থাকা ব্রাক ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ০.১০ টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ০.৪০ টাকা, ইস্টার্ণ ব্যাংকের ০.১০ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ০.১০ টাকা এবং উক্তার ব্যাংকের ০.২০ শতাংশ। আর দর অপরিবর্তীত থাকা কোম্পানিগুলো হলো- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।