BANK LAGOশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় আর্থিক খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবুও সময়ের বিবর্তনে দেশের পুঁজিবাজারে এ খাতের মূলধন ক্রমেই কমেছে। যদিও ২০১০ সালের ধস এবং ধস পরবর্তী ধারাবাহিক মন্দায় এ খাতের বাজার মূলধন অনেকটাই বেড়েছিল।

তবুও ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত (ছয় বছরে) এ খাতের বাজার মূলধন প্রায় ২৬ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা কমেছে। শতাংশ হিসেবে যা প্রায় ৩৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ খাতের বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল ৬৪ হাজার ৪০৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছরের শুরুতে তা বেড়ে ৬৮ হাজার ৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকায় দাঁড়ালেও ২০১১-১২ অর্থবছরের শুরুতে তা ৫১ হাজার ২৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকায় নেমে আসে।

এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে এখাতের বাজার মূলধন। মুলত, ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতের কোম্পানিগুলো বাজারে বিনিয়োগ শুরু করে। কিন্তু তা অব্যাহত না থাকায় পরবর্তীতে প্রায় প্রতিমাসেই এ খাতে বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে তা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আগস্ট মাসে ৪১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকায় নেমে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের আগস্ট মাসে এ খাতে বাজার মূলধনের পরিমাণ ৪১ হাজার ৭৩১ কোটি ৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ খাতের মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৩৩০ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজারে অন্য খাতের কোম্পানির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গ্রামীণফোন, তিতাস গ্যাসের মতো বিশাল মূলধনের কোম্পানি বাজারে এসেছে। বাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের সংখ্যাও এখন অনেক।

এছাড়া মূলধন ও শেয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগের মতো ঝোঁক নেই। এ কারণেই গত কয়েক বছরে বাজার মূলধন ও মোট লেনদেনে আর্থিক খাতের অংশ কমেছে।

বিশেষ করে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা ঊর্ধ্বমুখী বাজারে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলের শেয়ারের আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক খাত নিজের অংশ হারিয়েছে।

অন্যদিকে ২০১১ সালে টানা মন্দায় ওইসব কোম্পানির তুলনায় আর্থিক খাতের দরপতন বেশি হওয়ায় বাজার মূলধন ও লেনদেনে আর্থিক খাতের অবস্থানের উন্নতি ব্যহত হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি এ খাতের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে ফিরে আসলে বাজারে লেনদেন আবারো ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে ওঠে আসবে। তারা বলেন, পুঁজিবাজারে অন্য কোম্পানিগুলোর তুলনায় ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের বিনিয়োগ অনেকটা টেকসই।

কারণ এ খাতের কোম্পানিগুলোর পোর্টফোলিও ম্যানেজার বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোম্পানির ভালো মৌলভিত্তি দেখেই শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। পুঁজিবাজারে নিয়মিত আর্থিক খাতের বিনিয়োগ থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে অনেকটা আস্থা ফিরে পাবে। আর এই তিন খাতের বিনিয়োগ হ্রাস পেলে বাজারে কিছুটা হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে অন্যসব খাতের তুলনায় বর্তমানে ব্যাংক খাতের পিই সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে।

এছাড়া আর্থিক সক্ষমতার বিচারে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে সম্পদমূল্য বিবেচনায় এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অনেক কম। কাজেই এখানে বিনিয়োগ না করার কারণ তো আমি খুজে পাই না। বরং এ খাতে বিনিয়োগ করলেই বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে লাভ তুলে নিতে পারবে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মনিরুল আলম বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই স্বল্পমেয়াদে মুনাফার্জনে ব্যকুল। এ খাতের পেইডআপ বেশী হওয়ায় কেউ চাইলেই শেয়ার দরকে প্রভাবিত করতে পারে না। তাই অনেকেরই দৃষ্টি থাকে স্বল্পমূলধনীর দিকে।

এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ওইসব কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরের উলম্ফনে প্রভাবিত হন। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক খাতই নিরাপদ বলে মন্তব্য করেন তিনি। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ, দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম