riskশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৬ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ারের দর কোন কারন ছাড়াই লাগাতর বাড়ছে। যা বাজারের জন্য অশনি সংকেত। এছাড়া এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন ভুমিকা নিচ্ছে না। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন বাজার নিয়ে বারবার কারা খেলছে। তাদের আসল উদ্দশ্য নিয়ে এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। এছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা যার যতটুকু সাধ্য তা নিয়ে চেষ্টা করছেন।

কিন্তু তারপরও কোথাও যেনো একটি গলদ থেকে যাচ্ছে এবং বাজার উঠতে গেলেই একটি অদৃশ্য শক্তি সূচকের পেছন থেকে নিচের দিকে টেনে ধরে। মূলত এই অদৃশ্য শক্তিটিই বার বার পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএসইসিতে নাকি অত্যাধুনিক সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার আছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বসানো হয়েছে এ সফটওয়্যার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ সফটওয়্যারের কাজ কি? সবচেয়ে বড় কথা হলো- যা খালি চোখে দেখলেই অস্বাভাবিক মনে হয় তার জন্য সার্ভিল্যান্সেরই কি প্রয়োজন?

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারগুলো ননমার্জিনেবল, বেশিরভাগের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) রয়েছে ৪০-এর উপরে। এসব শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। আর ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এসব শেয়ার কিনতে সিকিউরিটিজ হাউস বা মার্চেন্টব্যাংকগুলো ঋণ সরবরাহ করে না। কিন্তু তারপরও এসব কোম্পানির শেয়ারের দর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যাকে ‘ব্যাকরণ বর্হিভূত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বেশ কিছু শেয়ারের দর লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। এর মধ্যে শ্যামপুর সুগার, ইস্টার্ন ক্যাবলস, সোনালি আঁশ, উসমানিয়া গ্লাস, মেঘনা পেট, নর্দার্ন জুটস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, জেমিনী সী ফুড ও লিবরা ইনফিউশন, রহিমা ফুড, দেশ গামেন্টন্স, আনলিমা ইয়ার্ন, বিডি অটোকার, আজিজ পাইপস, আনোয়ার গ্যালভাইনিজিং শেয়ার বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল ছাড়া বাকিগুলোর পিই রেশিও ৪০-এর বেশি।

এসব কোম্পানির বেশিরভাগই লোকসানি, তাই আগামীতে আশানুরূপ ডিভিডেন্ড ঘোষণা না করার সম্ভাবনাই বেশি। তবুও এক শ্রেণির কারসাজি চক্রের সদস্য সুযোগ নিচ্ছেন।

প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী, নন-মার্জিনেবল কোম্পানির দর বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির চতুর বিনিয়োগকারী। তারা অল্প টাকা বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। বেশিরভাগই লোকসানি কোম্পানি বা পিই রেশিও মাত্রাতিরিক্ত।

কিছুদিন ধরেই রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প করপোরেশনের তিনটি প্রতিষ্ঠান রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, জিলবাংলা ও শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ারদর বেড়েছে গড়ে ১০০ শতাংশেরও ওপর। কিন্তু সেদিকে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি-ও নিশ্চুপ রয়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১০ জুলাই শ্যামপুর সুগার মিলের প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ছয় টাকা। রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১০০ শতাংশের ওপর। একইভাবে ১০ জুলাই ইস্টার্ন ক্যাবলসের দর ছিল ১৩০ টাকা। রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৪ টাকা ৯০ পয়সা। এক মাসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৬৪ টাকা ৯০ পয়সা।

ডিভিডেন্ড ঘোষণাকে সামনে রেখে গত এক মাসে সোনালি আঁশের দর বেড়েছে ৪৫ টাকা। উসমানিয়া গ্লাসের দর বেড়েছে ৩৫ টাকা। আর নর্দার্ন জুটের দর বেড়েছে ১৩৫ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের।

কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫০১ টাকা। একই ধারায় লোকসানি প্রতিষ্ঠান লিবরা ইনফিউশনের দর বেড়েছে ১৪১ টাকা। কোম্পানিগুলোর দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মূল্যসংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের বিষয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।

নিম্নমানের শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ভিশন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, এসব শেয়ারের দর বৃদ্ধি কখনও বাজারের জন্য ভালো খবর নয়, বরং এসব শেয়ারের দর বৃদ্ধি পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে। বিনিয়োগকারীরা না বুঝে অনেক সময় এসব শেয়ারের পেছনে ছুঁটেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর ফল শুভ হয় না। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নরজদারি বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সর্তক থাকতে হবে। তারা সতর্ক থাকলে পুঁজি নিরাপদে থাকবে।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে স্টার্লিং সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘কোনো বিশেষ খবর কিংবা গুজবে অনেক সময় এসব শেয়ারের দর বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় এসব শেয়ারের দর বৃদ্ধির ধারা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের সব সময় খেয়াল রাখা দরকার।’

অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্চেন্ট ব্যাংক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা জানান, বাজারে অনেক ভালো শেয়ার থাকলেও বিনিয়োগকারীরা এখন স্বল্প সময়ে দ্রুত মুনাফা করার জন্য এসব শেয়ারের পিছে ছুঁটছেন। এটি বাজারের জন্য সুখের খবর নয়।