পুঁজিবাজারে শেয়ার শূন্য ১৬ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট

প্রশান্ত কুন্ডু শুভ, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বর্তমানে ৩২ লাখ ১৮ হাজার বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৯১ হাজার। বাকি ১৬ লাখ অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৪ লাখ ৮৪ অ্যাকাউন্টে কখনই শেয়ার ছিল না। ১১ লাখ ২৫ হাজার অ্যাকাউন্ট বর্তমানে শূন্য।
এসব বিও অ্যাকাউন্ট খুলে অনেকেই শুধু আইপিওতে (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আবেদন করছেন। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বহুবিতর্কিত অমনিবাস অ্যাকাউন্ট এখনও বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে এখনও বাজারে ৩৫০টি অমনিবাস অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ইলেট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সিডিবিএলের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে ৩২ লাখ বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে ঢাকাতে ২৫ লাখ এবং ঢাকার বাইরে ৭ লাখ। কিন্তু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৫১৮টি সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এগুলোতে শেয়ার আছে এবং এগুলো থেকে নিয়মিত লেনদেন হয়। এছাড়া ১১ লাখ ২৫ হাজার বিও ২৩৩টি অ্যাকাউন্টে কখনো কখনো শেয়ার থাকলেও গত বছরের জানুয়ারি থেকে তা শূন্য হয়ে যায়।
৪ লাখ ৮৪ হাজার ১০১টি বিও অ্যাকাউন্টে কখনোই কোনো শেয়ার ছিল না। এসব বিও অ্যাকাউন্ট সাধারণত আইপিওর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লটারিতে কোনো শেয়ার বরাদ্দ পায়নি বলে এসব অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার নেই বলে জানা যায়। অন্যদিকে ঢাকাতে বিও অ্যাকাউন্টের জন্য মেশিন রিডেবল হিসাব ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঢাকাতে ২৫ লাখ অ্যাকাউন্টের মধ্যে বেশ কিছু অ্যাকাউন্টে মেশিন রিডেবল হিসেব নেই।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে আইপিও আবেদনের জন্য নামে-বেনামে প্রচুর বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। একই ব্যক্তি এক থেকে দেড়শ’ পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। আর এসব বিওতে শুধু আইপিও আবেদন করা হয়। ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। কিন্তু ২০১০ সাল শেষে তা ৩৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আর এই প্রবণতা রোধে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা কমে আসে।
বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করতে ৫০০ টাকা লাগে। এরমধ্যে সিডিবিএল ১৫০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউস ১০০ টাকা, নিয়ন্ত্রকসংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ৫০ টাকা এবং বিএসইসির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ২০০ টাকা জমা হয়।
আর এ খাত থেকে গত বছর সরকারকে ৮১ কোটি টাকা দিয়েছে বিএসইসি। প্রতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে এই ফি সিডিবিএলে জমা দিতে হয়। এরপরই নবায়ন ফি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অ্যাকাউন্টগুলোর বন্ধ করা শুরু হয়। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন বাজারে স্বচ্ছতা আনতে ইতিমধ্যে অমনিবাস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। এখন বিও অ্যাকাউন্ট স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সময়। বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তি দেখে বিভিন্ন কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে অনেক লাভবান হবেন। কারণ যে কোনো সময়ের চেয়ে বাজার এখন অব মূল্যায়িত। তবে মুশকিল হল বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা হুজগে মাতে। তারমতে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এ সমস্যা রয়েছে।