bsec lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাবা: বিএসইসি’র আইনকে তোয়াক্কা করছে তিন মার্চেন্ট ব্যাংক। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পূর্বানুমোদন বাধ্যতামূলক। তবে তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংক এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো অনুমোদন নেয়নি।

অনুমোদন ছাড়া শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত সপ্তাহে নোটিস দিয়েছে বিএসইসি। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, নোটিস পাওয়া মার্চেন্ট ব্যাংক তিনটি হচ্ছে— ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও জিএসপি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর এমডি অথবা সিইও নিয়োগ, বরখাস্ত, ক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা, ১৯৯৬-এর কয়েকটি বিধি সংশোধন করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বিএসইসি। সে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মার্চেন্ট ব্যাংকের এমডি অথবা সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্ব অনুমোদন বাধ্যতামূলক।

একই সঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকের এমডি অথবা সিইও কোনো মার্চেন্ট ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার বা উদ্যোক্তা কিংবা পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না। আবার মার্চেন্ট ব্যাংকের এমডি বা সিইও পদটি তিন মাসের বেশি খালি রাখা যাবে না এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবেও কেউ তিন মাসের বেশি থাকতে পারবেন না।

তবে বিধিমালা লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদ শূন্য রাখা অথবা বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া এসব পদে নিয়োগ দেয়ায় গত এপ্রিলে ২০টি মার্চেন্ট ব্যাংককে চিঠি দিয়ে আইন লঙ্ঘনের কারণ জানতে চায় বিএসইসি।

পরবর্তীতে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুত বিধি পরিপালনের অঙ্গীকার করে। তবে ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও জিএসপি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড বিএসইসির চিঠির জবাবে দুঃখ প্রকাশ করলেও তা পরিপালনের বিষয়ে কিছু জানায়নি।

এ অবস্থায় শীর্ষপদে বিএসইসির অনুমোদনের কথা স্মরণ করিয়ে তা পরিপালন না করার কারণ জানতে চেয়ে গত সপ্তাহে আবার নোটিস পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাতদিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে মার্চেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে ৫১টি প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ শুধু পোর্টফোলিও ম্যানেজার, কেউ আন্ডার রাইটার অথবা ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার নিবন্ধন পেয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ পদে উচ্চ বেতনের কারণেই অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকের এমডি পদটি শূন্য রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রত্যাশিত আয় না আসায় অনেক প্রতিষ্ঠান উচ্চ বেতনে শীর্ষ কর্মকর্তা নিয়োগে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। মার্জিন ঋণ সংকট, নিজস্ব পোর্টফোলিওতে লোকসান ও ইস্যু ব্যবস্থাপনা করতে না পারায় অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকই পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে চলছে।

সাময়িকভাবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে মার্চেন্ট ব্যাংক চালাতে হলেও বিএসইসির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই এ অনুমোদন নেয়নি। আইন অনুযায়ী এমডি পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ যদি সে পদে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়, তবে কমিশন প্রয়োজনবোধে নির্ধারিত সময়ের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকেই বহন করতে হবে।

জানা গেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালক অথবা শেয়ারহোল্ডার কমিশনের অনুমোদন না নিয়েই সংশ্লিষ্ট পদে বহাল রয়েছেন। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এমডি অথবা সিইও পদ পূরণ করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। ভারপ্রাপ্তদের সাময়িকভাবে এ পদে থাকার বিধান থাকলেও কেউ কেউ বছরব্যাপী পদে বহাল রয়েছেন। আবার বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে এমডি পদটি দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে। শীর্ষপদে আইন লঙ্ঘনকারী এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের মালিকানাই ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে।

ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও তানজিল চৌধুরী। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরীর মালিকানাধীন ইস্ট কোস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজ। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে ইসি সিকিউরিটিজ। আজম জে চৌধুরীর ছেলে তানজিল চৌধুরী ইস্ট কোস্ট গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটি মূলত নিজেদের পোর্টফোলিও পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া আইপিওতে আন্ডার রাইটিং ও করপোরেট ফিন্যান্স করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় নিজের অংশীদারিত্ব থাকার পরও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে ইসি সিকিউরিটিজের সিইও হিসেবে তানজিল চৌধুরী রয়েছেন। অন্যদিকে উত্তরা ফিন্যান্স ও জিএসপি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের শীর্ষ নির্বাহীর পদ পূরণে বিএসইসির অনুমোদন নেয়া হয়নি।