জুলাই মাসে বেতন-ভাতায় বরাদ্দ ৫১,০০০ কোটি টাকা

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বেতন-ভাতায় বরাদ্দ থাকছে ৫১,০০০ কোটি টাকাআগামী বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বর্ধিত মূল বেতনের সঙ্গে কার্যকর হচ্ছে ভাতা সুবিধার অংশ। এ কারণে সরকারের ব্যয় এ খাতে আরও বাড়বে। আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেতন-ভাতায় মোট ৫১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে নতুন বাজেটে বাড়তি ব্যয় দাঁড়াবে ৯ হাজার কোটি টাকা।
জাতীয় বাজেটের বড় একটি অংশ খরচ হয় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে। বর্তমানে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ মোট বাজেটের ২১ শতাংশ ও জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ, যা আগে ছিল মোট বাজেট বরাদ্দের ১৮ শতাংশ ও জিডিপির ৩ শতাংশ।
২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অষ্টম পে স্কেল কার্যকর করা হয়। সিদ্ধান্ত ছিল, দু’ধাপে নতুন পে স্কেল পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে, অর্থাৎ চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেওয়া হবে শুধু বর্ধিত ‘মূল বেতন’; কিন্তু ভাতা সুবিধা পাবেন পুরনো স্কেলে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, অর্থাৎ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছর শুরু হলে তারা বর্ধিত ‘মূল বেতনের’ সঙ্গে ভাতা সুবিধা পাবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা পুরোপুরি কার্যকর করতে ব্যয় ৫১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। জুলাই থেকে পে স্কেল কার্যকর করা হলেও এ বছরের জানুয়ারিতে বর্ধিত মূল বেতন পান সরকারি চাকরিজীবীরা। এর মধ্যে ছয় মাসের বকেয়া দুই ধাপে দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে দেওয়া হয়েছে বৈশাখী বোনাস। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বর্ধিত মূল বেতন পাচ্ছেন মার্চ থেকে। তবে এখনও বকেয়া এবং বৈশাখী বোনাস পাননি তারা।
অষ্টম পে স্কেলে ১ নম্বর গ্রেডে সচিবের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মূল বেতন আট হাজার ২৫০ টাকা। নতুন স্কেল অনুযায়ী, সচিব এখন বর্ধিত মূল বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, আপ্যায়নসহ অন্যান্য ভাতা নিচ্ছেন পুরনো স্কেলে। নতুন অর্থবছরে আগামী ১ জুলাই থেকে তিনি বর্ধিত মূল বেতনের সঙ্গে ভাতা সুবিধাও পাবেন। একইভাবে কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও আগামী অর্থবছর থেকে বেড়ে যাবে।
ভাতা সুবিধা :বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা বর্ধিত মূল বেতনের সঙ্গে চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন ৭০০ টাকা। আগামী জুলাই মাসে পাবেন এক হাজার ৫০০ টাকা। ৬৫ বছরের বেশি বয়স হলে পাবেন দুই হাজার ৫০০ টাকা, যার পরিমাণ এখন এক হাজার টাকা। এখন শিক্ষা ভাতা ৩০০ টাকা, আগামী অর্থবছরে যা দাঁড়াবে ৫০০ টাকায়। টিফিন ভাতা ১৫০ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। যাতায়াত ভাতা দেড়শ’ টাকার পরিবর্তে হয়েছে ৩০০ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানাচ্ছে, বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা বেতনের পাশাপাশি ১৫-১৬ ধরনের ভাতা সুবিধা পান। নতুন পে স্কেলে এসবের বেশিরভাগ ভাতাই বেড়েছে, যা আগামী বাজেটে কার্যকর হবে। এ ছাড়া অষ্টম পে স্কেলে বৈশাখী বোনাস নামে আরও একটি নতুন ভাতা যোগ করা হয়, যা এরই মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীরা হাতে পেয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবী, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ২১ লাখ পেশাজীবী রয়েছেন, যারা নিয়মিত সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। সপ্তম পে স্কেলে সরকারি খাতে বেতন-ভাতা বাবদ মোট খরচ হতো ২৯ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অষ্টম পে স্কেলের জন্য আগের চেয়ে ‘অতিরিক্ত’ লাগবে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে লাগছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১০ হাজার কোটি টাকা লাগবে আগামী বছর।
মূল্যস্ফীতি ঘটেনি :ধারণা ছিল, নতুন পে স্কেল কার্যকর হলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে। এর কোনো প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি। মূল্যস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যার প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ পণ্যমূল্য নিম্নমুখী। দেশীয় বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারি খাতে বেতন বাড়লে মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে আরেকটি নেতিবাচক বিষয় দেখা দিতে পারে। তা হলো, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়লে এর চাপ বেসরকারি খাতেও পড়তে পারে। সূত্র : সমকাল