মানসম্মত আইপিও বাজারে আসলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে
ইসমাত জেরিন খান: ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ শতাংশের নিচে রাখার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না ২৫ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ শতাংশের উপরে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক যেমন আছে, একই সঙ্গে আছে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকও।
গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান ৫ শতাংশের নিচে রাখার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ ভিত্তিক স্প্রেডের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনেই ব্যাংকগুলোর স্প্রেডের সীমা না মানার তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকের সুদের হারের ব্যবধান পাঁচ শতাংশের উপরে যেসকল ব্যাংক করছে তার প্রধান কারণ অতি মুনাফার লোভ। আর একারণে প্রায় ২৫ টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না । আর এতে বিনিয়োগের সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে।
আর যারা ঋণ গ্রহীতা তাদের অতিরিক্ত সুদ দিতে হচ্ছে। ফলে তার যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি দেশের বিনিয়োগের উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। আর এতে সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে আনার সরকারের যে প্রচেষ্টা তা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এ নির্দেশনা পরিপালনে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আরো কঠোর না হয় তাহলে সরকারের উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে ঋণ গ্রহিতারা এবং অর্থনীতি। দেশের বিনিয়োগে স্থবিরতা আসতে পারে। আর যখন অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়বে তখন স্বল্প মেয়াদে না হলেও দীর্ঘ মেযাদে পুঁজিবাজারের উপর প্রভাব পড়বে। পুঁজিবজারে যেসকল প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রহণ করে ব্যবসা করে এর প্রভাব তাদের উপর পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারে পড়বে।
বর্তমান বাজারে চলছে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা রাখতে পারছে না। এতে লেনদেনের পরিমাণ প্রতিদিনই কমেছে। পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বহুলোকের কর্মসংস্থান তৈরি হলেও পুঁজিবাজারে বর্তমানে নতুন বিও একাউন্ট বাড়ার পাশাপাশি প্রয়োজন নতুন বিনিয়োগ।
বাজারে বর্তমানে সেকেন্ডারি মার্কেটে অর্থসংকট থাকলেও প্রাইমারি বাজারে তেমন সংকট দেখা যায় না কারণ নতুন কোনো ইস্যু আসলেই ওভার সাবস্ক্রাইব হতে দেখা যায়। বাজারের স্বার্থে নতুন বিনিয়োগকারীদের লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজন ডিএসই, সিএসই, ব্রোকারস এসোসিয়েশন ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর যৌথ উদ্যোগ।
ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে। এসপ্তাহে ঢাকার বাজারে রবিবার সর্বনিম্ন লেনদেন ছিল ২৫৮ কোটি টাকা । পুঁজিাবাজারে যারা ক্ষতিগ্রস্থ তাদের জন্য প্রায়ই অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি সহযোগিতা পায় না এধরনের ফান্ড দিয়ে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর পাশাপাশি ফান্ডের সুদের ১ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
এর আগে পুনঃঅর্থায়নের ৯০০ কোটি টাকা পরিশোধের সময়সীমা শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এ অর্থের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর সুপারিশ করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা । একই সাথে ফান্ডের অর্থের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করার সুপারিশও করা হবে।
বাজারের স্বার্থে এ ধরনের ফান্ডের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে এ ধরনের ফান্ড বিনিয়োগকারীদের তেমন কোনো সহযোগিতা করতে পারে না। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ ফান্ডগুলো মনিটরিংয়ের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
এর আগে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যে ফান্ড দেয়া হয়েছিল তা বিনিয়োগকারীদের তেমন কোনো উপকারে আসে নি। মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতার সাথে সাথে ফান্ডের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা এই ফান্ড পায় নি। বর্তমানে ফান্ডের সুদের ১ শতাংশ কমানো হলে বিনিযোগকারীরা সামান্য উপকৃত হবে কিন্তু পুঁজিবাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের জন্য দুই কোম্পানি আইপিওর জন্য আবেদন করেছিল। এই আবেদন বাতিল করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। দেরিতে হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার এবং ওইমেক্স ইলেকট্রোড লিমিটেড ১৫ কোটি টাকা করে মোট ৩০ কোটি টাকা পুঁজি সংগ্রহের অনুমোদন চেয়েছিল। এ কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য আইপিওর পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য মনে করে নি এসইসি। বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার ও বারাকা অ্যাপারেলস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা প্রায় অভিন্ন।
এসব কারণে আইপিও আবেদনটি বাতিল করেছে। যা ছিল বিনিযোগকারীদের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার শক্ত অবস্থান। যখন তখন যেকোনো আইপিও বাজারে যাচাই বাছাই না করে আসা পুঁজিবাজারের জন্য যৌক্তিক না। মানসম্মত আইপিও বাজারে এনে যেসকল কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে সেই ধরনের কোম্পানির অনুমোদন দেয়া উচিৎ।
লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা। একাধারে সাংবাদিক, লেখক, সংবাদপাঠিকা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালক। এছাড়াও অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার বিষয়ে রয়েছে তার সংবাদ ও টেলিভিশন টক শো। সদস্য, এফবিসিসিআই। কো-চেয়ারম্যান এসএমই, পাট, ইয়াং এন্টারপ্রাইনার ও পুঁজিবাজার বিষয়ক স্টান্ডিং কমিটি। বর্তমানে এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের সার্টিফাইড প্রশিক্ষক এবং উদ্যোক্তা।