dse-cseশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সংকটের নেপথ্যে রয়েছে নেতিবাচক মূলধন। বিনিয়োগকারীরা পুঁজিহ বিনিয়োগ করেই লোকসানের শিকার হয়েছিলেন। ফলে তারা নতুন বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না। এ ফলে লেনদেন বাড়েনি পুঁজিবাজারে।

বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন মাইনুল। সাম্প্রতিক সময়ে একটি ডিপিএসের টাকা পাওয়ায় শেয়ারবাজারে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এক মাসে মূলধন হারিয়েছেন ৭৬ হাজার টাকা। শতকরা হিসাবে যা প্রায় ১৬ শতাংশ।

এভাবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারীকে নিঃস্ব করে দিয়েছে পুঁজিবাজার। বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে, অতীতে যে কোনো সময়ের চেয়ে সংকটে পুঁজিবাজার। তলানিতে চলে এসেছে বাজার। দিন দিন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আর এই সংকটের পেছনে মূল কারণ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর নেতিবাচক মূলধন (ইক্যুইটি)।

বর্তমানে নেতিবাচক ইক্যুইটির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ২ হাজার ২শ কোটি টাকা এবং ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমার ব্যাপারে একটি সুরাহা হলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি।

এ জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে তারল্য সংকট কিছুটা রয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে শক্তিশালী মৌলভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারের দামও কমেছে। দেশের বিনিয়োগকারীদের পরিপক্বতার অভাব রয়েছে। এ কারণে তারা অবমূল্যায়িত বাজারেও বিনিয়োগ করে না।

তিনি আরও বলেন, বাজারে যে তারল্য সংকটের কথা বলা হচ্ছে, মূলত বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট থেকে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তারমতে, ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের ব্যাপারে একটি নীতিমালা এসেছে। এরপর বাজারের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা ছিল, বাস্তবে তা পূরণ হয়নি।

এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলছেন, নেতিবাচক মূলধন এই বাজারে দীর্ঘদিনের সমস্যা। এই সমস্যা কাটাতে কেউ উদ্যোগ নেয়নি। তবে বিভিন্ন হাউসগুলোর পক্ষ থেকেও কোথাও এর রিপোর্ট করতে হয় না। ফলে আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই।

উদাহরণ দিয়ে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘একটি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউস ৫০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে বাজারে এসেছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের টাকা মিলিয়ে তারা পোর্টফোলিওতে ৩শ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে।

এক্ষেত্রে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের বাজারমূল্য নেমে এসেছে ২শ কোটি টাকায়। এতে ওই হাউসের আনরিয়ালাইজড লোকসান ১শ কোটি টাকা। এই লোকসানের টাকা থেকে তার ইক্যুইটি ৫০ কোটি টাকা বাদ দিলে নেতিবাচক ইক্যুইটি থাকে ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া।

এভাবেই বাজারে ঝুঁকি তৈরি করছে নেতিবাচক ইক্যুইটি। তবে এ বছর এই সমস্যা কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। আগামী বাজেটে সহজ শর্তে অর্থায়নের জন্য বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বরাদ্দ রাখার দাবি করেছে এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এছাড়া এখাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় তারা।

মার্চেন্ট ব্যাংকারদের যুক্তি হল- নেতিবাচক ইক্যুইটির জন্য সরকারই দায়ী। কারণ ২০১১ সালে মার্চেন্ট ও ব্রোকারেজ হাউসের ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ফলে তাদের ইক্যুইটির টাকা লোকসান হলেও তারা শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি।

যে কারণে তারা আটকে গেছে। অন্যদিকে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমাও একটি সমস্যা ছিল। ২০০৯ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারে আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করে বিভিন্ন ব্যাংক। ওই সময়ে বিনিয়োগের সীমা ছিল ব্যাংকের মোট আমানতের ১০ শতাংশ। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যাংকগুলো বাজারে বিনিয়োগ করতে থাকে।

কোনো কোনো ব্যাংক এ সময়ে আমানতের ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিল। ফলে মৌলভিত্তি উপেক্ষা করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম সীমাহীনভাবে বেড়ে যায়। এরপর ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ তুলে নিয়ে বাজারে বিপর্যয় নেমে আসে।

পরবর্তীতে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়।

তবে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি থাকলে তা ৩ বছরের মধ্যে কমিয়ে আনার সময় বেধেঁ দেয়া হয়। আর চলতি বছরের ২১ জুলাই এ সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে বিষয়টির সুরাহা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।