চার ইস্যুতে পুঁজিবাজারে সুচক ও লেনদেন বেড়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে গত তিন কার্যদিবস ধরে সুচক ও লেনদেনের পরিমান বাড়তে শুরু করছে। তবে সুচক ও লেনদেনের পরিমান বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা আশা নিয়ে নতুন করে বাজারমুখী হওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করছে। বর্তমানে চার ইস্যুতে পুঁজিবাজারে সুচক ও লেনদেন বাড়ছে। এটা বাজারের জন্য খুব ভাল দিক। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দ্রুত বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হবে।
পুঁজিবাজারে ফের সক্রিয় হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নতুন করে বিনিয়োগমুখী হয়ে লেনদেন বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত এক থেকে দুই মাসের ব্যবধানে এ শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রতি শেয়ার ধারনের শতাংশ বেড়েছে প্রায় এক থেকে দেড় শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষনে এমনটিই দেখা গেছে। সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার ধারনের দিক দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শতকরা অংশ বেড়েছে। এছাড়া বর্তমানে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তারা।
পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এখন কোম্পানিগুলো বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন তারা। কোম্পানিগুলো যদি বাজার পরিস্থিতি সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করে, স্বীয়স্বার্থ কিছুটা ত্যাগ করার মনমানসিকতা দেখায়, তাহলে পরিস্থিতি অচিরেই স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, এটা খুবই ভাল যে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছে। তাহলে বাজারের ভিত্তি তৈরি হবে। বিনিয়োগকারীরাও বাজারের প্রতি আস্থাশীল হবে।
তিনি বলেন, সাধারন বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাজারে বড় ধরনের বিনিয়োগে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা অনেক সময় বাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনুপস্থিতির কারণে মন্দার বিষয়টি চিহিৃত করে থাকি। তারা বাজারে সক্রিয় থাকলে একদিন বাজারে মন্দা থাকলেও তা দীর্ঘায়িত হবে না। বরং দুই তিন ট্রেডিংয়েল পর বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রাকিবুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করা যায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হলে লেনদেন বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখরউদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো, বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা, কোনো প্রকার কারচুপি না করে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা।
তিনি বলেন,পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা লোকসান কমাতে এখন পাগলপ্রায়। এদিকে মার্জিন লোন নিয়ে যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের অবস্থা শোচনীয়। এ অবস্থায় তাদের একটাই প্রত্যাশা, কোম্পানিগুলো যদি একটু বেশি পরিমাণ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে তাহলে তারা অতীতের লোকসান কিছুটা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আবারও বাজারমুখী হবেন। এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিকিউরিটিজ হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ নিয়ে দোটানার মধ্যে পড়ে আছেন। বাজার নিম্নমুখী হওয়ায় অনেকের পোর্টফোলিও বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কারো কারো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। অন্যদিকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করবেন কি না, বা করলেও কতটুকু সফল হবেন তা নিয়ে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা।
তিনি আরো বলেন, কোম্পানিগুলো যদি বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রিজার্ভ থেকে কিছু অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করে তাহলে বাজারের প্রতি তাদের আস্থা ফিরে আসতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে কিছু কোম্পানি ফায়দা হাসিলের জন্য বিভিন্ন সময়ে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করে ভূয়া আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। আবার মাঝেমধ্যে কোম্পানিগুলো সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর মাধ্যমে নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য বাজারে ভূয়া মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে থাকে।
বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে তাদেরকে এ ধরনের কর্মকা- থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। বাজারের প্রতি আস্থা ফেরাতে কোম্পানিগুলো যদি বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখে তাহলে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হবেন। আর তারা বাজারমুখী হলেই স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
বিনিয়োগকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটাই চাওয়া একটি স্থিতিশীল বাজার। মাঝেমধ্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো বিনিয়োগকারীই নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন বলে মনে হয় না। আর যারা নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে ভাবছেন তারাই হারাচ্ছেন সর্বস্ব।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, এত পদক্ষেপ গ্রহণের পরও স্থিতিশীলতা ফিরছে না। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এখন পুঁজিবাজার গুজব নির্ভর। তারা বিনিয়োগকারীদের সচেতন হয়ে, গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।