takaশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো বিনিয়োগমুখী হলে বাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবো। তেমনি স্থিতিশীলতার আভাস দিবে বলে মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তালিকাভুক্ত তিন ব্যাংকের সাবসিডিয়ারী কোম্পানিকে নতুন করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক তিনটি এক্সপোজার সমন্বয়ের পরও শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের জন্য ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ছাড়ের আবেদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সম্মতি দেয়।

এদিকে বর্তমান বাজার নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোন কারন  নেই বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তারা বলেছেন, খুব শিগরিই বাজার ঘুরে দাঁড়াবো। কারন ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগমুখী হলে দ্রুত লেনদেন বাড়বে।তেমনি ঘুরে দাঁড়াবো পুঁজিবাজার। এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংক এই তিন ব্যাংকের বাড়তি বিনিয়োগ (Over Exposure) সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান হওয়ার পরও ইনডেক্স ২৩ পয়েন্ট কমে যাওয়াতে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

তবে এ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া বাজারে এখন থেকে আর বড় ধরনের কোন পতন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে তারা মনে করছেন। এছাড়া ১০ ব্যাংকের অনুমোদন সম্পন্ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফিরবে আস্থা, এটাই নীতি সহায়তার সুফল বলে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন।

এদিকে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এক্সপোজার সমস্যার সমাধান দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তিনটি ব্যাংককে এই সুযোগ করে দেয়। ব্যাংক তিনটির ওভার এক্সপোজার ছিল মোট ৫০৫ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকার শেয়ার বিক্রি না করে বরং এর সাথে আরো বাড়তি ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমোদন চেয়ে ব্যাংক তিনটির পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিনিয়োগের অনুমতি দেয়।

ব্যাংক তিনটি হলো এবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ৪র্থ ব্যাংক হিসাবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) পরিচালনা পর্ষদ তাদের ২৫% লিমিট পূরণ করতে দুই দফায় মোট ২১৮ কোটি (৯৩+১২৫) টাকার ছাড় নিয়েছে।

এবং একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে এই ব্যাংকটিও পূঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি বড় অংকের টাকা ছাড় চেয়ে আবেদন করেছে।  ‍দু’একদিনের মধ্যেই এমটিবির আবেদনটিতেও বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

সূত্র মতে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে এক্সপোজার সমন্বয়ের জন্য ২ বছরের সময় না বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত সীমায় বিনিয়োগ করা ১০টি ব্যাংকের জন্য সম্প্রতি নীতি সহায়তা ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব মহল বিশেষ করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার এ্যাসোসিয়েশন(বিএমবিএ),ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

তখন এই সংগঠনগুলো বলেছিল, সময় বাড়ানোর চেয়ে নীতি সহায়তায় বাজার বেশি লাভবান হবে। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য অনুযায়ী এখন সমন্বয় করার পরও ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য অতিরিক্ত অর্থের ছাড় পাবে। যদি চায়।

সেই সুযোগ নিতে গিয়ে সবার আগে তালিকাভূক্ত পূবালী ব্যাকের পর্ষদ তাদের অতিরিক্ত বিনিয়োগ ১৬০ কোটি টাকার সাথে সাবসিডিয়ারী পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধণে আরো ৫০০ কোটি টাকা স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অঙ্গীকার পূরনের অংশ হিসাবে পূবালী ব্যাংকের জন্য ৬৬০ কোটি টাকারই অনুমোদন দেয়।

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সর্বশেষ সংশোধনীতে আরোপিত শর্তের কারণে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে যায়। আগে প্রতিটি ব্যাংক তার আমানতের ১০ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারত। ২০১৩ সালের সংশোধনী অনুসারে এখন ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সক্ষমতা কমিয়ে পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম হিসেবে রক্ষিত স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও অবণ্টিত আয়ের (রিটেইন্ড আর্নিংস) ২৫ শতাংশ বিনিয়োগের বিধান রাখা হয়।

এই সংশোধনীর ফলে আগের আইনে বিনিয়োগ করা ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ সীমার বাইরে পড়ে গেছে। চলতি বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয় করতে হবে ওই ব্যাংকগুলোকে। এর জন্য ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এই বিক্রির চাপ কমাতেই বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সময় না বাড়িয়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি সমন্বয় করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে গত ডিসেম্বরে সহযোগী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা মূলধন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ হিসাবে না ধরার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সুবিধা পায় ব্যাংকগুলো। এরপরও ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার ওপরে থাকায় নতুন সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকা এবি ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধন ছিল ২৮০ কোটি টাকা। এখন আরও ৩২০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকটি।

অন্যদিকে ৬৫ কোটি টাকা থেকে মূলধন বাড়িয়ে ৩৬০ কোটি টাকায় নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ। নতুন করে ২৯৫ কোটি টাকা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধনে স্থানান্তরের সুযোগে পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নেমে এসেছে।

এর আগে একই ভাবে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের বাড়তি বিনিয়োগের সমস্যা সমাধান করা হয়। পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধন ছিল ১৬০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তায় ধারণকৃত শেয়ার ও সাবসিডিয়ারিকে দেয়া ঋণের ৫০০ কোটি টাকা নতুন করে পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজের মূলধনে স্থানান্তরের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন ৬৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। নির্ধারিত সীমায় নেমে এসেছে ওই ব্যাংকের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে সহযোগী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা মূলধন বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য না করার সিদ্ধান্তের পর ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনীর পর নির্ধারিত সীমার ওপরে ছিল ৩৬টি ব্যাংকের বিনিয়োগ। তা পর্যায়ক্রমে কমানো হয়েছে। বর্তমানে ১০টি ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমার ওপরে আছে।