লাগামহীনভাবে বাড়ছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের শেয়ারের দর!
ফাতেমা জাহান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ার লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। এ কোম্পানি ডিএসই নোটিশকে ডেন্ট কেয়ার করছেন। কোন কিছুতেই তোয়াক্কা করছেন না ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ার। গত এক বছরে মাথায় ৩০০ টাকায় শেয়ার এখন ৯৯৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে বলে একাধিক বিনিয়োগকারী শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে অভিযোগ করেছেন। স্বল্পমুলধনী কোম্পানি হওয়ার একটি চক্র গত এক মাস ধরে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে মেতে উঠছেন। ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের প্রাইস আর্নিং (পিই) রেশিও কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে ২৯৪.৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তাই এ কোম্পানিতে বিনিয়োগে উচ্চ ঝুঁকি বহন করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের।
আর কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ৪০-এর ওপরে উঠলেই সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগে উচ্চ ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেই শেয়ারকে ‘নন-মার্জিনেবল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ, সেই কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীরা কোনো মার্জিন ঋণ পান না।
এদিকে বর্তমান বাজারে সুচকের নিন্মমুখী প্রবনতা বিরাজ করলে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ার টানা দরবৃদ্ধি ছিল। হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়া এ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়া অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
এছাড়া দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ার নিয়ে হরহামেশা কারসাজি চলছে।এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কারণ জানে না বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক চিঠির জবাবে জানিয়েছে।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। হঠাৎ করে কোম্পানিটির শেয়ারের ব্যাপক উত্থানে গত ১৩ মার্চ কোম্পানিটির দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ওই নোটিশের জবাবে কোম্পানিটি কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানায়।
এদিকে টানা উত্থানে বিগত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে উঠে এসেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট। আজ কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৯৯৮.৭০ টাকায় হাতবদল হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, আজ, সোমবার ইন্টার্ন লুব্রিকেন্টের শেয়ার আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৭.৪৯ শতাংশ বা ৬৯.৬ টাকা বেড়ে সর্বশেষ ৯৯৮.৭০ টাকায় হাতবদল হয়। এদিকে, গেল দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বনিন্ম ৩০০ টাকা থেকে আজ সর্বোচ্চ ৯৯৮.৭০ টাকায় হাতবদল হয়েছে। আজ দিনশেষে কোম্পানিটির ১৩ হাজার ১৪৪টি শেয়ার ৪১৮ বার হাতবদল হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে আসে। এর অনুমোদিত মূলধন ৫ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার, প্রতিষ্ঠান ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং বাকি ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩০০ টাকা। পরের প্রত্যেক কার্যদিবস কোম্পানিটির শেয়ারদর ৮-৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। আর এতে আট কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার ৯৪ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ৫৮২ দশমিক ৬০ টাকা দরে লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকে সামান্য কারেকশনের মধ্যে দিয়ে টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে শেয়ারটির দর।
এদিকে, গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত অনিরীক্ষিত অর্ধবার্ষিকি (২য় প্রান্তিক) আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায় কোম্পানিটির মুনাফায় বড় ধরণের উল্লম্ফন ঘটেছে। ২য় প্রান্তিকের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল দশমিক ২০ টাকা এবং শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকর প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) ছিল ৩৫ দশমিক ২৪ টাকা।
কিন্তু অর্ধবার্ষিকির শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির মুনাফায় উল্লম্ফন ঘটে। এসময় শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১০ দশমিক ৯৯ টাকা। অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকিতে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১০ দশমিক ৭৯ টাকা। কিন্তু এসময়ে এনওসিএফপিএস হয়েছে (০.৭১) টাকা।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ার দর কয়েকদিন পরপর এভাবে বাড়তে থাকে। ডিএসই নোটিশ দিলে দর বাড়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানানো হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে। তবে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত হলে কারসাজি জড়িত কি না তা খুঁজে বের করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ কোম্পানির মুনাফার হার কখনোই এতো বেশি ছিল না। এর আগে কোন বছরেই কোম্পানিটি এক কোটি টাকার ওপর নিট মুনাফা করতে পারেনি। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই কোম্পানিটি এক কোটি টাকার ওপরে নিট মুনাফা করেছে। আর এমন খবরে কোম্পানিটির শেয়ারদর লাগামহীনভাবে বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের টালমাতাল পরিস্থিতির মধ্যে ও ইন্টার্ন লুব্রিকেন্টের শেয়ারের দর বাড়ার কারন কি। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। যে সকল বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত শিকার হবেন। তাই সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য ছাড়া গুজব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে এক প্রকার জুয়া খেলা (গ্যাম্বলিং) চলছে। তবে এবার ছোট বাজারে ছোট আকারে হচ্ছে। যে সব কোম্পানির দাম বাড়ার কথা, সে সব কোম্পানির দাম না বেড়ে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির দাম বেড়েই চলছে।
কয়েক দিন ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তিনি আরও বলেন, যে সব কোম্পানি সার্কিট ব্রেকারে পৌঁছেছে, তাদের দাম এত বেশি বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে এসব কোম্পানি নিয়ে বাজারে বিভিন্ন গুজব রয়েছে বলে জানান তিনি। আর কিছু কিছু বিনিয়োগকারী গুজব শুনে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।