powerশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে গত কয়েক মাস ধরেই জ্বালানী খাতের শেয়ারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। গত দুই অর্থবছর ধরেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ( ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে ছিল জ্বালানী খাত। তবে এ কেন জ্বালানী খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের এত আগ্রহ। এ নিয়ে শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমের একটি টিম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছে।

এর মধ্যে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের প্রায় ২০ শতাংশই রয়েছে জ্বালানী খাতের দখলে। অপরদিকে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) এ খাতের শেয়ারগুলো শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এক সময় জায়গাটি ছিল ব্যাংক খাতের দখলে। পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে পরিচিত এই ব্যাংক খাত এখন বেশ তলানিতে। ধারাবাহিকভাবে কমছে এ খাতের অবদান।

তাছাড়া সরকারের নীতি নির্ধারকসহ সব মহলে আন্তরিকতার ফলে গত সপ্তাহে বাজার কিছুটা স্থিতিশীলতার আভাস ছিল। ধারাবাহিক দরপতন ঠেকাতে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে নানামুখি তৎপরতা আর সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমান বাজারের পরিস্থিত উন্নয়নের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শে  বিদেশী বিনিয়োগকারীরা জ্বালানী খাতের শেয়ার বিনিয়োগ করছেন বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

ডিএসইর লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশই হয়েছে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো ঘিরে। এর আগের অর্থবছরেও (২০১৩-১৪) ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে ছিল এ খাত। সে সময় জ্বালানি খাতে লেনদেন হয়েছে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

কিন্তু কেন জ্বালানী খাত ঘিরে বিনিয়োগকারিদের এত আগ্রহ? প্রথমত, সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য জ্বালানি খাতকে খুবই প্রাধান্য দিচ্ছে। সরকারের নানা প্রতিশ্রুতিও রয়েছে এ খাত ঘিরে।

বর্তমানে দেশে সবচেয়ে ভাইব্রেন্ট খাত হলো জ্বালানি উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলেন, এ খাতের কোম্পানিগুলো গত কয়েক বছর ধরেই ভালো ব্যবসা করছে। যার ফলে তারা বিনিয়োগকারিদের ভালো মুনাফাও দিচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি।

দ্বিতীয়ত, জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সর্বশেষ হিসাব বছরে শুধু একটি কোম্পানি বাদে সব কোম্পানিই শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে লিন্ডে বিডি ৩১০ শতাংশ, পদ্মা অয়েল ১০০ শতাংশ, যমুনা অয়েল ১০০ শতাংশ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালস ৪০ শতাংশ, শাহজীবাজার পাওয়ার ৩১ শতাংশ, বারাকা পাওয়ার ১৬ শতাংশ, ডেসকো ১৫ শতাংশ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ৩০ শতাংশ, এমজেএলবিডি ৩০ শতাংশ, জিবিবি পাওয়ার ১৫ শতাংশ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ১০৫ শতাংশ, পাওয়ারগ্রীড ১৫ শতাংশ, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার ২৫ শতাংশ, সামিট পাওয়ার ১৮ শতাংশ, তিতাস গ্যাস ১৫ শতাংশ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ৩০ শতাংশ এবং বিডিওয়েল্ডিং ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাত হিসেবে একটি খাতের প্রায় সব কোম্পানি ভালো পরিমাণে মুনাফা করা এবং তা বিতরণ করা খুবই ভালো দিক। এজন্যই এ খাতের দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশী। শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য কোম্পানিগুলোর ভালো মুনাফা করা জরুরী। কারণ কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করতে পারলে কোম্পানিগুলোর দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। এতে বাজারও ইতিবাচক হবে।

ডিএসইর খাতভিত্তিক কোম্পানির তালিকা থেকে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ২২টি খাতে বিভক্ত। এর মধ্যে লেনদেন হয় ২০টি খাতের। এই ২০টি খাতে কোম্পানি আছে ৩৩০টি। ডিএসইর মাসভিত্তিক লেনদেনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট লেনদেনে প্রকৌশল, জ্বালানি, বস্ত্র ও ওষুধ খাতের অবদান ছিল ৫৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ দশমিক ৯০ শতাংশে। আর সদ্য সমাপ্ত মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ২২ শতাংশে।

বর্তমান বাজারে জ্বালানি খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। মার্চে মোট লেনদেনে এ খাতের অংশ ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে লেনদেনে জ্বালানি খাতের অংশ ছিল ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে জ্বালানি খাতের লেনদেন কিছুটা কমেছে।

এদিকে এক সময় পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত এবং লেনদেনের শীর্ষে থাকা ব্যাংক খাত চলে এসেছে ৬ষ্ঠ স্থানে। মার্চ মাস শেষে মোট লেনদেনে এই খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশে, যা ফেব্রুয়ারি শেষেও ছিল ৮ শতাংশের উপরে।

২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাত লেনদেনে প্রথম স্থান ধরে রাখে। সে সময় মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ২০ থেকে ২৫ শতাংশের উপরে ছিল। মূলত ২০১১ সালের পর থেকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের অবদান কমতে থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ফারুক আহমেদ শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সেই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করবে, যে খাত থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে।  ২০১০ ও ২০১১ সালে ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দিয়েছিল তা পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারেনি। যে কারণে ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেনে কিছুটা নেতিবাচাক প্রভাব পড়েছে।

জ্বালানি খাতের শেয়ারে অবদান বাড়ার কারণ হিসেবে এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, এই খাতগুলো ভালো করছে। অন্য খাতের কোম্পানির থেকে এ খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফা পাচ্ছেন, যে কারণে এই খাতের কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ‌আগ্রহ বাড়ছে।

একই বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা যে কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা পাবেন সাধারণত সে খাতেই বিনিয়োগ করবেন।