sharebazar lagoবিশেষ প্রতিনিধি, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের দুই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পুঁজিবাজার নীতি নির্ধারকরা বাজার উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট থাকায় বাজার ঘুরে দাঁড়াতো পারছে না। বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। এ পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘ ৬ বছর অতিবাহিত করেছে বিনিয়োগকারীরা।

২০১০ সালে ধসের ছয় বছর পরও বিনিয়োগকারীর কাছে এখনো আস্থাহীন দেশের পুঁজিবাজার। এখনো এটি পুঁজি হারানোর বাজার। ভালো-মন্দ বেশির ভাগ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও লাভের দেখা মিলছে না। তাই বাজারে আসতে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

এছাড়া সংকটের সময় পুঁজিবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন মহল থেকে নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সেগুলো আর বাস্তবায়ন করা হয় না। বারবার এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। তাই বর্তমান বাজার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট কাটলে হলে বাজার টানা স্থিতিশীল থাকতে হবে। তেমনি লেনদেনের পরিমান দ্রুত বাড়তে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মতে, কেলেঙ্কারির ঘটনার পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হলেও এ কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর আস্থা ফেরাতে বিএসইসির শীর্ষ পদে পরিবর্তন দরকার।

পুঁজিবাজারের আস্থাহীনতা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘কার হাতে এমন জাদু আছে, বাজারকে পরিপূর্ণ আস্থার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে পারে।’ তবে বাজারকে স্থিতিশীল করতে বিএসইসি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করছে আশা করি দ্রুত বাজার ঘুরে দাঁড়াবো।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের বিষয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুল হোসেন বলেন, ‘উনি মুরব্বি মানুষ। উনি বলতেই পারেন। কিন্তু কোন যুক্তিতে তিনি এ পরিবর্তনের কথা বলেছেন সেটি কেবল উনিই ভালো বলতে পারবেন।’

এদিকে বর্তমানে পুজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট খুব বেশি। ২০১০ সালে বাজার ধ্বসের পর কোন ভাবেই এই সংস্থা বাজারের গতি ফিরিয়ে আনতে পারেনি। বাজারে যেখানে তারল্য সংকট সেখানে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিয়ে তার উল্টা কাজটি করলো।

বাজারে নুতন নুতন শেয়ার তালিকাভুক্ত করে বাজারে শেয়ারের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়া হল। যদিও নুতন নুতন কোম্পানি গুলো কতটা মান সম্পূর্ণ তা নিয়ে বাজারে অনেক কানা গোসা রয়েছে। পুজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় এমন লোক নিয়োগ দেয়া উচিত যিনি দীর্ঘ দিন থেকে পুজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত। যিনি পুজিবাজারের সমস্যা গুলো বুজতে পারবেন এবং তার সমাধান করতে সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন।

ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের পুজিবাজারের স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। যার কথার সাথে কাজের মিল থাকবে। সময়ের সাথে সাথে বিনিয়োগকারীগণ তাকে পুজিবাজারের অভিভাবক হিসেবে দেখতে পাবে। তিনি যে পুজিবাজারের জন্য কাজ করছেন এটি সরকার নয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশ্বাসের সৃষ্টি করাতে হবে।

শুধু BSEC নয়, পুজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে পুজিবাজার সম্পর্কে ধারনা রাখেন এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডে একজন হলেও পুজিবাজার বিশ্লেষক নিয়োগ দিতে হবে যিনি ব্যাংক গুলোর পাশাপাশি পুঁজিবাজারের স্বার্থেও কথা বলতে পারবেন।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলছেন, দীর্ঘ ৬ বছর অপেক্ষা করেও আমরা একটি ভালো বাজার পেলামনা। বিভিন্ন পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে ঢাক ঢোল বাজিয়ে বাজার উন্নয়নের কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারণে ঘুরে ফিরে বাজার সেই পতনের বৃত্তেই হাঁটছে। আর এতে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন বিনিয়োগকারী।

আব্দুর রহমান নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন। বিশেষ করে কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে। অনেক দিন থেকেই লক্ষ করা গেছে কোম্পানিগুলোর আয়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে।

২০১০ সালে বাজার ধসের পর শেয়ারের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন কোম্পানিগুলোর মুনাফাতেও ধস নেমেছে। প্রকৃতপক্ষে শেয়ারের দামের সঙ্গে কোম্পানির মুনাফার কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। শুধু তাই নয়, একটি কোম্পানির মুনাফার ক্ষেত্রে অবশ্যই ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।

কিন্তু বাজারের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, শেয়ারের দাম বাড়লেই শুধু মুনাফা বাড়ে আর শেয়ারের দাম কমলেই মুনাফা কমে যায়। আসলে এটি একটি কারসাজির অংশ। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া চলবে না। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে কোম্পানিগুলোর আয়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেবল তখনই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক সাবেক পরিচালক বলেন, বাজারে বিনিয়োগকারীদের পদচারণা কেমন তা বোঝার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাজারের লেনদেন। লেনদেনবিহীন পুঁজিবাজার একটি মৃত বাজারের শামিল। টাকার অবমূল্যায়ন থেকে শুরু করে আমরা যদি বাজারে বর্তমান শেয়ার সংখ্যার দিকেও লক্ষ করি তাহলে এই বাজার ন্যূনতম ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হওয়া উচিত।

অথচ আমদের বাজার ৫০০ কোটি টাকার ওপরেই উঠতে পারে না। মাঝে মাঝে তো ২৫০ থেকে ৩০০ কোটিতে লেনদেন হয়। এই অবস্থায় যদি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলে পুঁজিবাজারে আস্থার কোনো সংকট নেই; তাহলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হবে।