মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ কমতে পারে !
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০০১-এর সংশোধনীর খসড়ায় আরো পরিবর্তন আসছে। এতে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ থেকে কমিয়ে ৫ বছরে নামিয়ে আনা হতে পারে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ৭ ডিসেম্বর মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার কিছু সংশোধনীর খসড়া অনুমোদন দেয় কমিশন।
সে খসড়ায় মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়। তবে আরো কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকায় সেটি জনমত যাচাইয়ের জন্য দেয়া হয়নি। জানা গেছে, অনুমোদিত খসড়ার অধিকাংশ সংশোধনী বহাল রাখা হলেও ফান্ডের মেয়াদসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তনের চিন্তা করছে কমিশন। তবে মেয়াদি (ক্লোজ এন্ড) মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ পাঁচ বছরে নামিয়ে আনা হলেও তিন-চতুর্থাংশ ইউনিটহোল্ডারের মতামতের ভিত্তিতে আরো একবার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রাখা হতে পারে।
এদিকে মেয়াদ বাড়ানো কিংবা বেমেয়াদিতে রূপান্তর ইস্যুতে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাদের অনেকেই বলছেন, কোনো ইউনিটধারী রূপান্তর কিংবা মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়ে হেরে গেলেও তাদের মতের প্রতিফলন থাকা উচিত। ইউনিটের বিপরীতে সম্পদমূল্য ফেরত পাওয়ার একটি সুযোগ থাকা উচিত তাদের জন্য। দেশের ট্রাস্ট আইনেও একপক্ষকে বঞ্চিত করে অন্যকে সুবিধা দেয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠানকে।
একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি, রূপান্তর কিংবা অবসায়ন প্রক্রিয়ার সময় কোনো ইউনিটধারী তার ইউনিট জমা দিয়ে সম্পদমূল্য ফেরত চাইলে, তার জন্য সে সুযোগ রাখা উচিত। প্রতিবেশী ভারতের মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালায় এমন সুযোগ রয়েছে।
বর্তমান মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালায় সভায় উপস্থিত ইউনিটহোল্ডাদের তিন-চতুর্থাংশের মতামতের ভিত্তিতে অবসায়ন কিংবা রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি বলা আছে। তবে আইনে ‘উপস্থিত ইউনিটহোল্ডার’ কথাটির মাধ্যমে ভোটিং ক্ষমতা নির্ধারণের বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না। এছাড়া কোন পরিস্থিতিতে হাত তুলে ভোট নেয়া হবে কিংবা কোন পরিস্থিতিতে ব্যালটের (পোল) মাধ্যমে মতামত নেয়া হবে তাও আইনে স্পষ্ট ছিল না।
সর্বশেষ সংশোধনীর খসড়ায় মেয়াদ বৃদ্ধি অথবা রূপান্তরের ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে এবং ধারণকৃত ইউনিটের সংখ্যার ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেয়ার বিধান স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে সংখ্যালঘিষ্ঠের অধিকার বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। অবশ্য মেয়াদি ফান্ড বিশেষ অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ইউনিট বাই-ব্যাক করতে পারবে— এমন সুযোগ রাখা হয়েছে খসড়ায়।
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০০১-এর সংশোধনীর খসড়ায় পুঁজিবাজার ও পুঁজিবাজারবহির্ভূত বিনিয়োগ পত্রকোষ (পোর্টফোলিও) প্রতিবেদন মাসিক ভিত্তিতে প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
অবশ্য স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশনস সংশোধনীতে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পোর্টফোলিও প্রকাশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ইউনিটপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিইউ) এখন থেকে প্রতি সপ্তাহের পরিবর্তে দৈনিক ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে।
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার সংশোধনীর খসড়ায় সম্পদ ব্যবস্থাপক কর্তৃক বেমেয়াদি বা ইউনিট ফান্ড (ওপেন এন্ড) বিক্রয় ও পুনঃক্রয় মূল্যের পার্থক্য ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বর্তমানে তা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশে নির্ধারিত। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারবহির্ভূত যে বিনিয়োগসীমা রয়েছে তার সর্বোচ্চ অর্ধেক পরিমাণ অর্থ অর্থাত্ মোট ফান্ডের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করতে পারবে মিউচুয়াল ফান্ড।
ফান্ডের লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ধারা সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফান্ড কখন লভ্যাংশ হিসেবে পুনর্বিনিয়োগ (রিইনভেস্টমেন্ট) দিতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে সঞ্চিতির ঘাটতি না থাকলে অন্তর্র্বতী লভ্যাংশ প্রদানেরও সুযোগ থাকছে সর্বশেষ সংশোধনীতে। সঞ্চিতি নির্ধারণ ও সম্পদ মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট পন্থা প্রণয়ন করা হবে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনো ফান্ডের নিট সম্পদের ওপর সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের ফি নির্ধারণ হয়ে থাকে। এতে ইউনিটহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারা না পারার কোনো শর্ত নেই। তবে সর্বশেষ সংশোধনীতে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ও ট্রাস্টির ফি কাঠামো পরিবর্তন করার প্রস্তাব রয়েছে।
এতে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের ফি কর্তনের বিধান রাখা হয়েছে। আবার কোনো সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি নির্দিষ্ট হারের বেশি লভ্যাংশ প্রদান করতে পারলে নির্দিষ্ট হারে তাকে উত্সাহমূলক বোনাস ফি প্রদানেরও ব্যবস্থা থাকছে।