sharebazer lagoআফজাল হোসেন লাভলু, ফাতিমা জাহান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকার সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কোনো ক্রমেই দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার।  সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও বাজারের প্রতি দিন দিন আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ফলে উভয় পুঁজিবাজারের সূচক পতনের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজারর সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কোন কারনে বাজার প্রতিনিয়ত দরপতন হচ্ছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বরং অদৃশ্য শক্তিতে ঘুরপাত খাচ্ছে পুঁজিবাজার।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে লেনদেন ক্রমাগত কমে যাওয়াকে বাজারের জন্য অসনিসংকেত বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছলতা হারাচ্ছেন। পাশিপাশি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়ে গেছে।

ইতিমধ্যে অনেকে লোক ছাঁটাই শুরু করেছে। বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিদের ভরসাস্থল তৈরি করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া দ্রুত প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কোনো একটি চক্রের ইশারায় চলছে পুঁজিবাজার এমনটা দাবি বিনিয়োগকারীদের। আর এসব চক্র এতই শক্তিশালী যে তাদের কাছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে দাবি করে বিনিয়োগকারীরা। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কারসাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আজও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

এতে আরো বেপরোয়া হয়ে পড়ছে কারসাজি চক্র। যাদের হাতে সরকার বাজার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে তাদের অনেকেরই বিরুদ্ধে বাজারে কারসাজি করার অভিযোগ রয়েছে। তারা অন্য কারসাজি চক্রের সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন এমন দাবি তাদের।

বিনিয়োগকারীরা আনোয়ারুল হক বলেন, বাজার নীতিনির্ধারকদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশায় বাজার একটু ভালোর দিকে এগোলেই বিনিয়োগ করেন। কিন্তু কারসাজি চক্র আবার বাজার অস্থির করে তুলে।

অবুঝ ও অন্যের ওপর ভরসা করা বিনিয়োগকারীরা অস্থির হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর এই সুযোগে কম দরে শেয়ার ক্রয় করছে কারসাজি চক্র। তাই বাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কারসাজি চক্র চিহ্নত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ও তাদের কবল থেকে বাজারকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এ বিনিয়োগকারী।

এদিকে গেল সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে একদিন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও দরপতন হয়েছে বাকি তিনদিন। এ সময় সব ধরনের মূল্য সূচকের পাশাপাশি কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে দুই হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।

ডিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটিদিন থাকায় এ সপ্তাহে চারদিন লেনদেন হযেছে দেশের শেয়ারবাজারে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, একদিকে দেশের পুঁজিবাজারে পর্যাপ্ত অর্থ সরবারহ নেই। অন্যদিকে লোকসানের ভয়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে আসছে না নতুন বিনিয়োগকারী। এছাড়াও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিযোগকারীরাও বাজারে অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে।

ফলে ৩০০ কোটি টাকার ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে লেনদেন। আর এসব করণে আস্থাহীনতায় নতুন করে শেয়ার কিনছে না বিনিয়োগকারীরা। যাদের বাজারে বিনিয়োগ রয়েছে তারাও আস্তে আস্তে শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে বাজার মূলধন।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, কারসাজি চক্র বাজার নিয়ে যখন যা ইচ্ছা তখন তাই করছে। তারা বাজার ইতিবাচক হচ্ছে এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে দেয় যার ফলে লেনদেন না বাড়লেও কয়েকদিন শুধুমাত্র সূচকের বৃদ্ধি হয়।

এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী লোভে পড়ে শেয়ার ক্রয় করেন। পরক্ষণেই আবার নেতিবাচক মন্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দেয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে তিনি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট প্রকট। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতো পারছে না। তবে ব্যাংকগুলোর আমানতে বিপরীতের সুদের হার যে হারে কমেছে তার একটা প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে বলে মনে করেন। ফলে পুঁজিবাজারও আগের তুলনায় স্বাভাবিক গতিতে চলবে বলে তিনি মনে করেন।