sharebazer lagoআমীনুল ইসলাম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন পর বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বস্তির নি:শ্বাস ফিরে এসেছে। গত দু কার্যদিবস দরপতনের পর মঙ্গলবার ঊর্ধ্বগতিতে পুঁজিবাজারের প্রান ফিরে এসেছে। স্বস্তি বাতাস বইছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তির ভাব ফিরে এসেছে, যার প্রভাব দেখা গেছে সূচক ও কেনাবেচার পরিস্থিতিতে।

‘শেয়ারবাজার অবান্ধব’ গভর্নরের বিদায়ে আনন্দ মিছিল বের করার পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা গেছে অনেক বিনিয়োগকারীকে। মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। বেশির ভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে সূচকেও বাড়তি পয়েন্ট যোগ হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থার ফল হিসেবে এই ঘুরে দাঁড়ানো বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে সংশয়ও রয়েছে। কারণ গত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বহুবার এভাবে স্থিতিশীলতার আভাস পাওয়া গেছে। কিন্তু কোনো বারই স্থায়ীভাবে স্থিতিশীলতার দিকে যায়নি বাজার পরিস্থিতি।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ইস্যুতে ড. আতিউর রহমান মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর দুপুরে ডিএসইর সামনে বিনিয়োগকারীরা আনন্দ মিছিল করেন। এ সময় তাদের অনেকে গভর্নরের শাস্তিও দাবি করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ ও ২০১০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতায় শেয়ারবাজারে বুদবুদ তৈরি হয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আকস্মিক নির্দেশেই বিনিয়োগ প্রত্যাহার শুরু হলে শেয়ারবাজারে ধস নেমে আসে। এ পরিস্থিতির জন্য বিনিয়োগকারীরা আতিউর রহমানকেই দায়ী করে আসছেন।

ধস-পরবর্তীতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা তাদের দায়ের ১০ শতাংশের পরিবর্তে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংকের ও নিজস্বভাবে আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের মোট পরিমাণের ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না মর্মে এক নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে এককভাবে ব্যাংক তার ইকুইটির ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। আর সাবসিডিয়ারিসহ সমন্বিতভাবে তা হয় ৫০ শতাংশ। এতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সংকুচিত হয়ে পড়ে।

ব্যাংকের নতুন বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের ফলে সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকাজের হাউজের বিনিয়োগও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এতে সেকেন্ডারি বাজারে তারল্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা কোনো ছাড় না দেয়ায় দীর্ঘমেয়াদে মন্দাভাব তৈরি হয়, যা বর্তমানেও অব্যাহত। অবশ্য গত ডিসেম্বরে এতে ব্যাংকের সহযোগী ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা মূলধন ব্যাংকের একক বিনিয়োগসীমায় অন্তর্ভুক্ত রাখা সম্পর্কিত পূর্ববর্তী নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে শেয়ারবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে সময় বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অর্থ উপদেষ্টা ও বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিকবার সুপারিশ করলেও তা কখনই আমলে নেননি আতিউর রহমান। এমনকি গত নভেম্বরে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে সময় বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও গত পাঁচ মাসে তা কার্যকর করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে চলতি বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বিনিয়োগ সমন্বয়ের আইনি বাধ্যবাধকতা এখনো রয়ে গেছে, যার প্রভাবে অস্থিরতা কাজ করছে শেয়ারবাজারে। একইভাবে দীর্ঘমেয়াদি ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে গণনার যে দাবি স্টেকহোল্ডাররা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন, তাও আমলে নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত গভর্নর আতিউর রহমানের অনাগ্রহেই শেয়ারবাজারের মন্দা দূরীকরণের সুপারিশগুলো কার্যকর হয়নি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো, দীর্ঘমেয়াদি ও তালিকাবহির্ভুত কোম্পানির সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার গণনা না করার দাবির বিষয়টি গভর্নর আতিউর রহমান আমলে নেননি।

শেয়ারবাজারের পতনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষেত্রে এর উল্টো মনোভাব রয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এসব কারণে আগে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শেয়ারবাজারবান্ধব নন, গভর্নর শেয়ারবাজারের বিকাশে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাই গভর্নরের পদত্যাগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছে, যা লেনদেন বাড়াতে সহায়তা করেছে বলে আমি মনে করছি।