বিএসইসি সতর্ক করল ডিএসই চেয়ারম্যান ও এমডিকে
স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) আইন ও কর্মসূচির (স্কিম) ব্যত্যয় ঘটিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ কারণে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) যথাযথভাবে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও কর্মসূচির আলোকে অর্পিত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গতকাল বৃহস্পতিবার এ নির্দেশ দিয়েছে। এদিনই এ-সংক্রান্ত সতর্কপত্র ডিএসইতে পাঠানো হয়েছে। ডিএসই কর্তৃপক্ষ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও কর্মসূচির কী কী ব্যত্যয় ঘটিয়েছে, তা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে এ ধরনের আইন ও কর্মসূচি প্রণয়নের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান চিঠি পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এর আগে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও কর্মসূচি যথাযথভাবে পরিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যানকে সতর্ক করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে সংস্থাটির এক কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিএসইসি। সিএসইর পর গতকাল চিঠির মাধ্যমে ডিএসইর চেয়ারম্যান ও এমডিকেও সতর্ক করা হয়।
বিএসইসির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএসইর একজন মহাব্যবস্থাপকের চাকরিচ্যুতিসহ ব্যবস্থাপনার দৈনন্দিন কাজে পরিচালনা পর্ষদের হস্তক্ষেপের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে বিএসইসি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তদন্ত করেনি।
তা সত্ত্বেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ অবস্থায় এ ধরনের বিচ্যুতির ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
নাম প্রকাশে বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও কর্মসূচিতে পরিচালনা পর্ষদের কাজ ও ব্যবস্থাপনার কাজ সুনির্দিষ্ট করা আছে। কারও কাজে যাতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারে, সে জন্য এটি করা হয়েছে। তারপরও ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে পরিচালনা পর্ষদের কারও কারও হস্তক্ষেপের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা অপ্রত্যাশিত। এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর এমডির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে মনোমালিন্য ও দ্বন্দ্বের জের ধরে সিএসইর সাবেক এমডি ওয়ালি উল মারুফ মতিন পদত্যাগ করেন। সেই পদত্যাগের সূত্র ধরে বিএসইসি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে। তাতে ব্যবস্থাপনার কাজে পরিচালনা পর্ষদের প্রভাব ও হস্তক্ষেপের প্রমাণ পায়।
এ কারণে সংস্থাটিকে সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে সংস্থাটির প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) আহমেদ দাউদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিএসইসি।
বাজার পরিস্থিতি: এদিকে একটানা ছয় কার্যদিবস পতনের পর সপ্তাহের শেষ দিনে গতকাল দুই বাজারে সূচক সামান্য বেড়েছে। তবে উভয় বাজারে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে গেছে। ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল দিন শেষে প্রায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৭৩ পয়েন্টে। আর সিএসইর সার্বিক সূচকটি এদিন মাত্র দুই পয়েন্ট বেড়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর সূচক সাড়ে চার হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নেমে আসার পর সূচককে টেনে তুলতে বুধবার হয়তো কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছিল। তাতে লেনদেনের বেশ গতি ছিল ওই দিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সূচক ইতিবাচক থাকায় বাড়তি কোনো বিনিয়োগ করতে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠানকে।
এ জন্য আগের দিনের চেয়ে গতকালের লেনদেনের ব্যবধানটি চোখে পড়ার মতো ছিল। গত মঙ্গলবার দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলতি বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সাড়ে চার হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে।
এর পরদিন বুধবারও সূচক আরও খানিকটা কমেছে। তবে মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার লেনদেন প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭৮ কোটিতে। কিন্তু গতকাল সেই লেনদেন আবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে যায়। সুত্র: প্রথম আলো