আমিনুল ইসলাম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বিনিয়োগকারীরা দিন দিন হতাশ  হয়ে পড়ছেন। এ খাতে বিনিয়োগ করে মুল পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক অবস্থায় আছে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো। এতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে হতাশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

আর বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা অন্য ব্যবসায় ব্যবহারের মত বড় ধরনের অনিয়ম ডুবিয়েছে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাময় এ খাতকে। তাদের মতে এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে যেমন কঠোর হতে হবে, তেমনি সচেতন হতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও।

পুঁজিবাজারের তথ্য পর্যালোচনার জ্ঞান কম, কিংবা ঝুঁকির মাত্রা সহনীয় রেখে মোটামুটি মুনাফা পেতে চান, মনে করা হয় এমন বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড আকর্ষণীয় খাত। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে তা এখন ভাবনার খোরাক হয়েছে।

বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৪৩টি মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে ৩১টির ইউনিটের দাম ফেসভ্যালুর নিচে। অর্থাত্ প্রায় ৭২ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম ফেসভ্যালুর নিচে নেমে এসেছে। এমনকি ১৩টি ইউনিটের দাম চার টাকার ঘরে অবস্থান করছে। যেখানে প্রতিটি ইউনিটের ফেসভ্যালু ১০ টাকা। মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা হতাশ।

পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় অবদান রাখার কথা যে খাতের, তার দুরবস্থার জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষ পেশাদারিত্ব এবং জবাবদিহিতার অভাবকে সামনে আনছেন পর্যবেক্ষকরা।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড খুবই জনপ্রিয়। এমনকি প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে পরিস্থিতি একেবারেই উল্টো। এখানে মিউচুয়াল ফান্ড হলো সবচেয়ে অজনপ্রিয়।

যারা মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট ক্রয় করেছেন তারা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন। এতে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের  মনে এতোটাই শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, নীট এসেট ভ্যালুর অনেক নিচে নেমে আসার পরও মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার উন্নয়নের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়ন হতে হবে। কারণ এসব দক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভালো ভূমিকা রাখতে পারলে বাজারও ইতিবাচক হবে। কিন্তু আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ডই ভালো মুনাফা করতে পারছে না, ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই মিউচুয়াল ফান্ডে।

ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, আইসিবির ৮টি মিউচুয়াল ফান্ড, এইমস ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, গ্রামীণ ওয়ান, আইসিবি ১ম এনআরবি এবং ভ্যানগার্ড বিডি ফাইনান্স মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান ছাড়া আর সব মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম ফেসভ্যালুর নিচে। এর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্য মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদ পরিস্থিতি খুবই নিম্নমুখী। ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমানে ৯টি মিউচুয়াল ফান্ডের নীট এসেট ভ্যালু (এনএভি) ১০ টাকার নিচে। অবশিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে ১৬টির এনএভি ১০ টাকার ঘরে।

এদিকে এনএভি কম থাকায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও কম। তবে ইউনিটের দাম এনএভিরও নিচে নেমে যাওয়াকে বিনিয়োগকারীদের হতাশার প্রতিফলন বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। মিউচুয়াল ফান্ডের ২০১৫ অর্থবছরের আয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ অর্থবছরে ১৯টি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি আয় হয়েছে এক টাকারও নিচে। আর দুটি ইউনিটে হয়েছে লোকসান।

ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, যতদিন পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। ততদিন পর্যন্ত এ ফান্ডগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে না। দামও থাকবে কম। আর ভালো লভ্যাংশ দিতে পারলেই মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। এর বড় দৃষ্টান্ত হলো আইসিবির ফান্ডগুলো।

আইসিবির ফান্ডে ভালো লভ্যাংশ দেয়া হয় বলে এ ফান্ডগুলো ঠিকই উচ্চ দরে বিক্রি হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহও আছে। কিন্তু অন্য বেশিরভাগ ফান্ডই দক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে তারা মুনাফা করতে পারছে না। তবে অনেক ফান্ড ২০১০ এ তালিকাভুক্ত হওয়ায় সে সময় বাজার থেকেও তারা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে।