সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক
ফাতেমা জাহান : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক লেগেছে। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। এ কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ঘোষনা প্রতিনিয়ত আসছে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ কোম্পানির মোট ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৮টি শেয়ার বিক্রি করবেন ৭ উদ্যোক্তা পরিচালক। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিগত সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকরা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।
বিশেষ করে ২০১১ সালে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকেরা বাজার থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। পরিণতিতে বাজারে তারল্য ও শেয়ারের সংকট দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই ২০১২ সালে বাজারের উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) অর্থ মন্ত্রণালয়ে কিছু সুপারিশ করেছিল। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা করার প্রস্তাবনা অন্যতম। তবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ন হলেও এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাজার-বিশ্লেষকরা বলেন, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির কোনো সঠিক নীতিমালা না থাকার কারণে এর সুযোগ নিচ্ছেন তারা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কেউ যদি ১০ টাকায় শেয়ার পেয়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রির সুযোগ পান, তিনি তো বিক্রি করবেনই। তবে উদ্যোক্তারা বিনামূল্যে শেয়ার পেয়ে বাজার দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আইনে কোনো বাধা না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালকরা নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো শেয়ার বিক্রি করছেন। বিএসইসি’র উচিত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ানো হয়। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হলে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যায়। শেয়ার বিক্রির ঘোষণা ও সেলপ্রেসারে আবারো নিম্নমুখী হয় শেয়ার দর। এরপর আবার শেয়ার ক্রয়, কারসাজির মাধ্যমে অতিমূল্যায়িত করা এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা। কারসাজির কারণে কিছু ব্যক্তি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ২০১০ সালেও এমন কারসাজির জের ধরেই নামে স্মরণকালের ভয়াবহ ধস।
কিন্তু বছরের পর বছর কারসাজির খেলা চললেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ। তাই এখনো সক্রিয় সুবিধাবাদী চক্র, সাড়ে পাঁচ বছর টানা দরপতনের পর শেয়ার দর একটু বাড়তেই উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসছে। এর জের ধরে কারসাজির সঙ্গে বাড়ছে সেলপ্রেসার। স্থিতিশীল হতে গিয়েও বারবার হোঁচট খাচ্ছে বাজার।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় চলমান একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু বাজারে শেয়ার লেনদেন, সূচক ও কোম্পানির শেয়ার দর একটু বাড়তে শুরু করলেই শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বাড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ার দর কম থাকা অবস্থায় শেয়ার কিনে তারপর কারসাজির মাধ্যমে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলেও বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জানা যায়, উদ্যোক্তা পরিচালক রুবিনা হামিদের হাতে নিজ প্রতিষ্ঠানের মোট ২১ লাখ ৪১ হাজার ৩৮২টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৭৪ হাজার ৬২২টি শেয়ার বিক্রি করবেন তিনি।
এদিকে এ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক চিত্র রঞ্জন মজুমদার, সিনথিয়া মালেক, জাহিদ মালেক, রাহাত মালেক, সাব্বির হোসাইন এবং ফজিয়া মালেকের হাতে নিজ প্রতিষ্ঠানের যথাক্রমে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৯১টি, ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬৬টি, ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৭০০টি, ৩২ লাখ ২১ হাজার ৮৭০টি, ৬ লাখ ২৫ হাজার ৪০০টি এবং ১২ লাখ ৭২ হাজার শেয়ার রয়েছে।