সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন উধাও ১০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, সূচক কমেছে ১৬৪ পয়েন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। তেমনি দিনের পর দিন ঢালাও দরপতন চলছে। এতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা। ঢালাও দরপতনের সঙ্গে লেনদেনের গতিও কমতে শুরু করেছে। ফলে কোনোভাবেই থামছে না ফের সূচকের পয়েন্ট হারানো ও দরপতন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ আর ক্রন্দন। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।
ভিটেবাড়ি ও সম্পদ বিক্রি করে এখানে বিনিয়োগ করে আজ পথে বসেছে। আশার আকাশে প্রতিদিনই নিরাশার কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। লোকসান দিতে হতে বিনিয়োগকারীরা আজ সর্বশান্ত হচ্ছেন। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যস্ত রয়েছেন জরিমানা সহ ইস্যুতে। ফলে সূচকের টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন পুঁজিবাজারে উত্থানের পর টানা দরপতনের রহস্য কী।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব আচরন করছে। ফলে গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবস সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। এতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১৬৪ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়েছে।
এছাড়া সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া যে কয়টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার প্রায় চারগুণ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। এমন ঢালাও দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন উধাও প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। তবে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই- সিএসই মিলে বাজার মূলধন উধাও ১০ হাজার ৭৬৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে সপ্তাহজুড়ে সূচক বড় দরপতন হলেও ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ১৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন ৭ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ১ হাজার ৪২৫ কোটি ৩১ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৮৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮৬০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৮৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৩৪ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ৩৩ পয়েন্টে। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে ৩৯৬ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯ টির, দর কমেছে ২৯৮ টির এবং ১৯ টির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩২.৩৩ পয়েন্ট বা ০.৮৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৪৭ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ০.৯৯ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৯৭৭ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.৮২ শতাংশ কমে ৯ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৭০ শতাংশ কমে ৯৪৮ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ৭.৩৬ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২০ হাজার ৪২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৮৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৬৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩২১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, দর কমেছে ১৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

